পরিবেশ– প্রকৃতি রক্ষায় ব্যর্থ হলে পরের প্রজন্মের কাছে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে : ড. হাছান মাহমুদ

পরিবেশ– প্রকৃতি রক্ষায় ব্যর্থ হলে পরের প্রজন্মের কাছে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে : ড. হাছান মাহমুদ
পরিবেশ– প্রকৃতি রক্ষায় ব্যর্থ হলে পরের প্রজন্মের কাছে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে : ড. হাছান মাহমুদ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পরিবেশ– প্রকৃতি রক্ষায় ব্যর্থ হলে পরের প্রজন্মের কাছে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে রক্ষা করতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রয়াস দরকার। পরিবেশ, প্রকৃতি সংরক্ষণ, বন সৃজন অন্য কারো জন্য নয়, নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই করা প্রয়োজন। অন্যথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদেরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। খবর বাসসের।

মন্ত্রী গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বিশেষ অতিথি এবং সচিব ড. ফারহিনা আহমদ স্বাগত বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আমাদের নিত্য সঙ্গী। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্ত বিরূপ প্রভাব আমাদের দেশে দৃশ্যমান। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে পরিবেশ সংরক্ষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমাদের সরকার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় সেই দুরূহ কাজ করতে গিয়ে অনেক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। তার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণে বিশ্বের সর্বোচ্চ পদক ‘চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে, যা জাতির জন্য বিপুল সম্মান ও স্বীকৃতির পরিচায়ক।

পরিবেশবিদ ড. হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করেছেন সে উদাহরণ হচ্ছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ, মাথাপিছু সর্বনিম্ন কৃষি জমি এবং আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর ৯২তম দেশ হওয়া সত্ত্বেও ধান ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ছোট্ট একটি দেশে প্রধানমন্ত্রীর অনন্য ব্যবস্থাপনাতেই এটি সম্ভবপর হয়েছে।

২০০২ সাল থেকে দশ বছর আওয়ামী লীগের প্রথম পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বপালনকারী হাছান মাহমুদ এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বিট প্লাস্টিক পলুশন, ইকোসিস্টেম রিস্টোরেশন’ অনুসারে প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বছরে পৃথিবীতে ৪শ’ মিলিয়ন টন এবং এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ৩ হাজার টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয় এবং বিশ্বব্যাপী ১১ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়। এ অবস্থা চললে বিশেষজ্ঞদের মতে ৫০ বছরে অনেক জায়গা মৎস্যশূণ্য হয়ে যাবে, থাইল্যান্ডের সমুদ্র অনেকটা মৎস্যশূণ্য হয়ে গেছে। আবার প্রতিদিন দেড়শ’ থেকে দুইশ’ প্রজাতির প্রাণী প্রায়বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে প্রায় ১৩৭টি প্রজাতি বিলুপ্ত হচ্ছে বনভূমি উজাড় হওয়ার কারণে।

পরিবেশের এসব বিপর্যয় রোধে সমপ্রচারমন্ত্রী সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিবেশ সচেতন। আসুন সবাই মিলে দেশ গড়ি, পরিবেশ রক্ষা করি এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করি।

পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করে জানান, প্লাস্টিক দূষণ রোধে দশ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে বৃক্ষাচ্ছদিত ভূমির পরিমাণ বর্তমান ২২.৩৭ ভাগ থেকে ২৫ শতাংশে এবং বনভূমির পরিমাণ ১৪.১ ভাগ থেকে ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারের উদ্যোগের সাথে দেশব্যাপী সকলের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সাবের হোসেন চৌধুরী বিশ্বের সামনে পরিবেশগত তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হারানো এবং প্লাস্টিক বিস্ফোরণের অভিঘাত মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশও এই অভিঘাতের বাইরে নয়। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।

শেষে তথ্যমন্ত্রী কনভেনশন সেন্টার সংলগ্ন শেরেবাংলা নগরে পরিবেশ মেলা, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা উদ্বোধন করেন এবং অতিথিবৃন্দকে নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড;