প্রধানমন্ত্রী ত্যাগী নেতাদের খোঁজে

প্রধানমন্ত্রী ত্যাগী নেতাদের খোঁজে
প্রধানমন্ত্রী ত্যাগী নেতাদের খোঁজে

হাবীব রহমান।।

রাজনীতি থেকে অভিমানে যখন মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার উপক্রম ঠিক তখনই মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীর হাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের টিকেট তুলে দিলেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

এর কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। ফেনীর এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা জয়নাল হাজারীকে চিকিৎসার মোটা অঙ্কের অর্থ সহায়তা দেন। রাজনীতি থেকে এক রকম নির্বাসনে থাকা হাজারীকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা করে নেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, এভাবে সারা দেশে দলের ত্যাগী নেতাদের খুঁজছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা দলের দুঃসময়ে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন, দলের পোড় খাওয়া নেতাকর্মী; কিন্তু দলীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেননি এমন নেতাদের রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আর যেসব নেতাকর্মী বিএনপি-জামায়াত জোটের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে এখনও অসুস্থাবস্থায় আছেন তাদের দিচ্ছেন আর্থিক অনুদান। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও শিল্পী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের দুরবস্থায়ও প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় আর্থিক সেবা দিচ্ছেন। দলের যেসব নেতাকর্মী বিএনপি-জামায়াতের আক্রমণে নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি। নিজের তহবিল থেকে এসব পরিবারকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তাও দিচ্ছেন। যোগ্যতা অনুযায়ী প্রয়াত ত্যাগী নেতাদের পরিবারের সদস্যদের দলীয় মনোনয়ন, সরকার কিংবা দলীয় পদ-পদবী দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মূল্যায়ন করছেন দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

গত বছর শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের চিকিৎসায় সহায়তা করেন প্রধানমন্ত্রী। নগদ এক লাখ টাকার চেক এবং ২০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র অনুদান হিসেবে প্রদান করেন তিনি। এ বছরের শুরুতে নড়াইলের নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা খাজা নাজিমুদ্দিনের পরিবারকে আট লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক অনুদান পেয়েছেন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা যুবলীগের নেতা আবু সাঈদ মোস্তফা কামাল। ২০১৫ সালের নলছিটি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের হামলায় আহত আবু সাঈদ মোস্তফা কামালের চিকিৎসার জন্য গত ২ জানুয়ারি পাঁচ লাখ টাকার চেক অনুদান হিসেবে প্রদান করেন তিনি।

গত বছরের জুনে কিডনি রোগে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ স্ত্রীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক মঙ্গা।

২০০০ সালের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের সময় জামায়াত-শিবিরের আক্রমণে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়ায় নিজ বাড়িতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওসমান গনি চৌধুরী মারাত্মক আহত হন। চলতি বছরের শুরুতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহযোগিতা পান।
গুরুতর অসুস্থ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আ ন ম শফিকুল হকের চিকিৎসার জন্য অনুদান দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বার্ধক্যে উপনীত শফিকুল হক যদিও এর কিছুকাল পর মারা যান।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ নূর উদ্দিন আল মাসুদের চিকিৎসার জন্য ২৫ লাখ টাকা অনুদান দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অধ্যক্ষ নূর উদ্দিন আল মাসুদ ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। এ সময় যৌথবাহিনীর চরম নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এক পর্যায়ে তার দুটি কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে।

লক্ষীপুর জেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী ২০০২ সালের ১০ জানুয়ারি বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন এবং পরে একই বছরের ১৩ জানুয়ারি মারা যান। এ ঘটনায় তার বাবা নূরুন্নবী একটি মামলা দায়ের করেন। ২০০২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাকেও হত্যা করে। বিপ্লবের মা নাসিমা আক্তারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহত্তর সিলেটের সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য মরহুম শামসু মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া বেগমকেও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম লুৎফর রহমান সারকুমের স্ত্রী চৌধুরী মতি মেহের।

দলের নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই দলের তৃণমূলের ত্যাগী ও অসুস্থ নেতাদের খোঁজখবর রাখেন। নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজখবর রাখেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর দলীয় ও সরকারি উইং কাজ করে।

যারা দীর্ঘদিন বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হয়েছিলেন; কিন্তু সুবিধাভোগীদের চাপে পড়ে রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন, সুবিধাভোগীদের চাপে নিজেদের আড়াল করে রেখেছেন এমন অভিমানী নেতাদের খোঁজ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এ ছাড়া তৃণমূলের যেসব নেতা পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে দলের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যারা নির্যাতিত হয়েছেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় যারা নিহত ও আহত হয়েছেন এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা দলের জন্য কাজ করেছেনÑ এমন তৃণমূলের নেতা যারা পরবর্তী সময়ে কোনো পদ-পদবী পাননি বা মন্ত্রী-এমপি বা কোনো কিছুই হতে পারেননি তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। সময়-সুযোগ হলেই তাদের রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেন।

মূলধারার রাজনীতির বাইরেও যারা আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করেছেন। আওয়ামী মনোভাবাপন্ন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত, যারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মেধার স্বাক্ষর রেখে, দেশের সুনাম অর্জন করে এখন দুঃসময় কাটাচ্ছেন এসব ব্যক্তির খোঁজছেন তিনি।