প্রধানমন্ত্রী আরও দুটি বোয়িং বিমান কেনার ইঙ্গিত দিলেন

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

প্রধানমন্ত্রী আরও দুটি বোয়িং বিমান কেনার ইঙ্গিত দিলেন
প্রধানমন্ত্রী আরও দুটি বোয়িং বিমান কেনার ইঙ্গিত দিলেন
প্রধানমন্ত্রী আরও দুটি বোয়িং বিমান কেনার ইঙ্গিত দিলেন

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য আরও দুটি বোয়িং বিমান কেনার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সততা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যে বিমানগুলো রয়েছে সেগুলো ছাড়াও বিমানের বহরে আরও তিনটি ড্যাশ বোম্বাডিয়ার বিমান যোগ হবে। আমরা আরও একটি খবর পেয়েছি যে, বোয়িং শিগগিরই তাদের আরও দুটি বিমান বিক্রয় করবে, তা কেউ অর্ডার দিয়ে নেয়নি। সুযোগটা আমরা নেব।

শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে বিমানের বহরে চতুর্থ ড্রিমলাইনার রাজহংসের যুক্ত হওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

এ প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ভালো রয়েছে। কাজেই নিজস্ব অর্থে আরও দুটি বিমান ক্রয় করলে সমস্যা হবে না মর্মে উল্লেখ করে তিনি যাত্রীসেবা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে যাত্রী পরিবহন বৃদ্ধিতেও বিমান সংশ্লিষ্টদের মনোনিবেশ করার নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবসময় আমরা রিজার্ভ হিসাব করি এই কারণেই কেননা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক দেখা দিলে আমাদের যদি খাদ্য কিনতে হয় তাহলে যেন তিন মাসের খাদ্য আমরা কিনতে পারি সে পরিমাণ অর্থ জমা থাকতে হবে। এর অতিরিক্ত অর্থ রেখে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। সেটা আমরা উন্নয়নের কাজে লাগাতে পারি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। কাজেই খুব যে আমরা বিপদে পড়বো তা নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য যে পরিমান মজুদের দরকার তা আমরা মজুদ রাখছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য গুদাম বা সাইলোগুলোতে কুলিং সিষ্টেম করে দিচ্ছি যাতে খাদ্য অন্তত দুই-তিন বছর ভাল থাকতে পারে। কাজেই সমস্ত দিক বিবেচনা করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক, বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) মুহাম্মাদ এনামুল বারী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোকাব্বির হোসেইন স্বাগত বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, কূটনৈতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর. মিলার ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী টারমার্কে ফিতা কেটে বিমানবহরের চতুর্থ ড্রিমলাইনার বিমান রাজহংসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বিমানে উঠে বিমানটি ঘুরে দেখেন এবং পাইলট এবং ক্রুদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একটা অনুরোধ করবো যে এত কষ্ট করে এত অর্থ দিয়ে বিমান কিনে দিয়েছি। অন্তত এর রক্ষণাবেক্ষণ সেটা যেমন আপনাদের আন্তরিকতার সঙ্গে দেখতে হবে, সেই সাথে সাথে যাত্রী সেবার মান বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের বিষয়টা সততার ও নিষ্ঠার সাথে নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আমরা ভৌগলিক অবস্থানের কারণে অনেক বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারব। ‘বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানে আমরা পূর্ব এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারি। সেভাবেই কিন্তু আমরা আমাদের দেশটাকে গড়ে তুলতে পারি। আমি আশা করি বিমানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন।’

এবারের হজ ফ্লাইট সুচারুরূপে পরিচালিত হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের হজ ফ্লাইট একেবারে চমৎকারভাবে হাজিরা গিয়ে ফিরে এসেছেন। এভাবে সুষ্ঠুভাবে হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ঠিক একইভাবে যেন আমাদের যাত্রীরাও অন্যান্য জায়গায় যারা যাবেন, তারাও যেন ভালভাবে যাতায়াতটা করতে পারেন।

তার সরকার বিমানের বিভিন্ন বন্ধ ষ্টেশনগুলো নতুনভাবে খোলার এবং নতুন গন্তব্য সৃষ্টির উদ্যোগ নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনশাল্লাহ লন্ডনে আমরা আরো দুইটি শ্লট নিতে পারব। আমরা ঠিক করেছি সেটা ম্যাঞ্চেস্টারে হলে ভাল হয় কারণ নর্থ ইংল্যান্ডে বববাসরতদের এ ধরনের একটি দাবি রয়েছে।

পাশাপাশি বোয়িংয়ের ড্রিম লাইনার নিয়ে ভবিষ্যতে ঢাকা থেকে নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে যাওয়ারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠা করে যাওয়া রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে নতুন নতুন বিমানবন্দর গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান বিমানবন্দরগুলোকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে গড়ে তোলায় তার সরকারের উদ্যোগসমূহও বক্তব্যে তুলে আনেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকার প্রধান বলেন, আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে কক্সবাজারের বিমানবন্দরটিকে আমরা উন্নয়ন করছি। তাছাড়া, সিলেট, সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল- অর্থাৎ ২০০১ এর পর যেগুলো একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সবগুলো আমরা চালু করেছি এবং উন্নত করেছি। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরই ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম এবং সিলেট দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আমরা করে দিই। কক্সবাজারটাকেও আমরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে প্রস্তুত করছি এবং সেখানে যেন আ্ররও বড় প্লেন নামতে পারে সেই ব্যবস্থাও আমরা করব। সেই সঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। কাজেই এখানে আরও কর্মচাঞ্চল্য যেমন বাড়বে তেমনি কর্মসংস্থারেনরও সৃষ্টি হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দারিদ্র্য বিমোচন যত হবে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যত বাড়বে মানুষ কিন্তু আমাদের সমস্ত কিছু ব্যবহার করারও সুযোগ পাবে। আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের স্যাটেলাইট যেমন উৎক্ষেপণ করেছি তাছাড়া ইন্টারনেটের ব্রডব্যান্ড সেবা প্রতিটি ইউনিয়নে আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। কারণ মানুষ যেন ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করতে পারে সে সুযোগটাও আমরা করে দিচ্ছি।

তার সরকার দেশকে আর্থিকভাবে আরও উন্নত করার নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, এই রপ্তানির ক্ষেত্রেও আমরা চাচ্ছি খাদ্য এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য যাতে রপ্তানি করতে পারি এবং অন্যান্য পণ্য রপ্তানির সুযোগটা যেন আরও বৃদ্ধি পায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা দুটি কার্গো বিমান আমরা ক্রয় করব। তাছাড়া উন্নতমানের কার্গো ভিলেজ আমরা তৈরি করে দেব। যাতে করে আরও সহজভাবে এই রপ্তানি আমরা করতে পারি। সে ব্যবস্থাও আমরা নেব। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকার স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে স্বীকৃতি পেয়েছি সেটা ধরে রেখে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করব। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সময়টাকে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি, ইনশাল্লাহ দেশকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, জাতির পিতার সেই স্বপ্ন আমরা পূরণ করব।

আওয়ামী লীগের সরকার টানা তিন মেয়াদে সরকারে থাকায় দেশের উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন এবং দেশে সরকার পরিচালনার ধারবাহিকতা বজায় থাকাটাকে উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিই আমরা আনন্দিত। বাংলাদেশ সারাবিশ্বের সঙ্গে আজকে তাল মিলিয়ে চলছে। বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে এবং সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটাকে পরিকল্পনার মধ্যদিয়ে আমরা এমন একটা অবস্থানে রাখতে সমর্থ হয়েছি যেখানে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যার সুফল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ পাচ্ছে এবং ধনী গরিবের বৈষম্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

মানুষের মাঝে কর্মস্পৃহা সৃষ্টির জন্য তাদের স্বপ্ন দেখানোর প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে আসলে স্বপ্ন দেখাতে হয় এবং সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নও ঘটাতে হয়। তাহলেই মানুষের মধ্যে একটি কর্মস্পৃহা জাগে। আর জনগণ যখন কাজ করে এবং তাদের মধ্যে যখন কর্মস্পৃহা জাগে তখনই উন্নয়ন করাটা সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশ আজকে সার্বিকভাবে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক সেটাই আমরা চাই। বাসস।