পাটি শিল্প বেত সংকটে

পাটি শিল্প বেত সংকটে
পাটি শিল্প বেত সংকটে

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই ।।

মীরসরাইয়ের ঐতিহ্য পাটি শিল্প পাটিপাতা ও বেত সংকটের কারণে বিলুপ্তির পথে। গ্রাম-গঞ্জে গায়ে হলুদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অভিজাত ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে শীতল পাটির বহুকাল ধরে। তবে বিভিন্ন কারণে শীতল পাটির ব্যবহার আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। এরপরও কিছু মানুষ শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ঐতিহ্যবাহী পাটি বোনাকে পেশা হিসেবে ধরে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, পাটি পাতা দিয়ে অনেক আধুনিক সৌখিন সামগ্রীও তৈরি করা সম্ভব। চীন থেকে সারাবছর কতশত ঘর সাজানোর উপকরণ আমদানি হয় দেশে। করোনা ভাইরাসের কারণে এখন তাও হুমকির মুখে। কিন্তু পাটি পাতা দ্বারা এর চেয়ে আধুনিক উপকরণ তৈরি সম্ভব শুধু মীরসরাই এলাকা থেকেই। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ। এতে করে কমবে হস্তশিল্পের জন্য চীন নির্ভরতা। উপজেলার মিঠাছরা বাজারে এখনো প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার হাটের দিনে ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত পাটির হাট প্রমাণ করে এই শিল্পের উপযোগিতা।

জানা যায়, এক সময়ে মীরসরাই উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে শীতল পাটি বোনা হত। এখন মিঠানালা, ওচমানপুর, দুর্গাপুরসহ কয়েকটি গ্রাম ছাড়া অন্য গ্রামগুলোতে এর কাজ নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র মিঠানালা গ্রামেই ৫০টি পরিবার এই পেশার সঙ্গে জড়িত। শীতল পাটি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পাটি বোনা হয় এসব গ্রামে। সাধারণ পরিবারের অভিজ্ঞরাই শীতল পাটি বোনে। একটি বড় সাধারণ পাটি বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। একই মাপের একটি শীতল পাটি বিক্রি হয় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। এছাড়া মাঝারি ও ছোট আকারের শীতল পাটি আকার ও সাইজ অনুযায়ী কম দামে বিক্রি হয়। দুর্গাপুর গ্রামের পাটি পাতা বুননকারী কুমার নাথ (৪৮) জানান, আগে পাটি বানানোর পর বাজারে বিক্রি করতে হতো। চাহিদা থাকায় এখন লোকজন বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু দিনে দিনে নানা প্রতিকূলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাটিপাতা দিয়ে অন্যান্য পণ্যও তৈরি করা যাচ্ছে না।

তিনি জানান, পূর্বপুরুষের এই পেশার প্রতি তাদের এক ধরনের মায়া জন্মেছে। তাই চাইলেও পেশা ছাড়তে পারছেন না। মিঠানালা গ্রামের পাটি বুননকারী দুবোন সবিতা রাণী ও নমিতা রাণী জানান, গাছ ও বেতের পর্যাপ্ত উৎপাদন না থাকায় পাটি তৈরি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে পাটি তৈরির এ পেশা এখন বিলুপ্তির পথে।

উপকরণের অভাবে পাটি শিল্প বিলুপ্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, এই বিষয়ে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া মিঠাছরা বাজারের পাটির হাটকে আধুনিকায়নসহ হস্তশিল্প বিকাশ কেন্দ্র করার বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করব।