দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত যেসব আ’লীগের কাউন্সিলরপ্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ

দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত  যেসব আ’লীগের কাউন্সিলরপ্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত যেসব আ’লীগের কাউন্সিলরপ্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ঘোষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকায় থাকা অনেকের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া’ রাজনৈতিক পদবি ব্যবহার, পতিতা ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী গ্রুপ ও কিশোর গ্যাং চালানোর অভিযোগের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে এলাকার কোনো কর্মকান্ডে না থাকার বিভিন্ন অভিযোগ আলোচিত হচ্ছে। অনেকেই বলছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার করে তারা দলীয় মনোনয়ন বাগিয়েছেন।

এছাড়া বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িতরা কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পেয়েছেন বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ। এ জন্য তাদের ঠেকাতে বিকল্প পরিকল্পনা নিয়েছে খোদ দলটির ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কমিটির নেতৃবৃন্দ। নতুনদের সুযোগ করে দেয়ার আহ্বানের সুযোগ নিয়ে নানান সমাজবিরোধী কর্মকা-ে যুক্তরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় নির্বাচনের সময় কৌশলে বিকল্প প্রার্থী দাঁড় করানোর পাশাপাশি ওই কাউন্সিলরপ্রার্থী যাতে কোনোমতেই জনপ্রতিনিধি হতে না পারে তারও পরিকল্পনা পাকা করেছে চট্টগ্রাম নগরে দলটির ওয়ার্ড ও থানা কমিটির নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান কাউন্সিলরদের অধিকাংশই ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েকজন কাউন্সিলরপ্রার্থী সরাসরি দলের বিরুদ্ধে না গিয়ে দলীয়প্রার্থীকে ঠেকাতে নিয়েছেন বিকল্প পরিকল্পনা।

ইতোমধ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া একাধিক প্রার্থীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলের থানা পর্যায়ের নেতারা। তাদের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া’ রাজনৈতিক পদবি ব্যবহার করে এবং ভুল তথ্য দিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তারা হলেন- লালখানবাজার ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল, চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলরপ্রার্থী সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু, বক্সিরহাট ৩৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী নুরুল হক এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর (৯, ১০ ও ১৩নং ওয়ার্ড) তছলিমা বেগম নুরজাহান, ১৪, ১৫, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে শিউলী দে এবং ১২, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে নুর আক্তার প্রমা। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ইতোমধ্যে নুর আক্তার প্রমার দলীয় মনোনয়ন বাতিল করেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। আবুল হাসনাত বেলাল, হাজী নুরুল হক, তছলিমা বেগম নুর জাহান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা দলীয় ভুয়া পদবী ব্যবহার করে মনোনয়ন নিয়েছেন। শিউলী দের বিরুদ্ধে অভিযোগ নির্বাচনে ২৫ বছরের কম কেউ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন না। কিন্তু শিউলী দে’র বয়স ২২ বছর হলেও তিনি কিভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

১৪ নম্বর লালখানবাজার ওয়ার্ডে আ’লীগ দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কখনো নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য পদে ছিলেন না। যে পদ দিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন, আসলে সেই পদে তার কোনো পদ নেই। জানতে চাইলে লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক আহমেদ  বলেন, ১৪নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল দল না করেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। তিনি খুলশী থানা আওয়ামী লীগেরও কোনো পদে নেই। এমনকি আওয়ামী লীগে কোনো অংঙ্গসংগঠনের পদেও নেই। আমি জানি না, সে দল থেকে কিভাবে মনোনয়ন পেয়েছে। এ ব্যপারে ২৪ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মিটিং ডেকেছি, সেদিন তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।

তবে আবুল হাসনাত বেলালের দাবি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে মৌখিকভাবে সদস্য পদ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য পদ মৌখিকভাবে দিয়েছেন। তবে কোনো সংগঠনের প্যাডে লিখিত দেননি।

চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলরপ্রার্থী সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আ’লী লীগের উপদেষ্টা নন, কোনো কালে তিনি দলের কোনো পর্যায়ের পদবীতে ছিলেন। তিনি যখন যে ক্ষমতায় এসেছিল তখন তাদের সাথে মিলেমিশে চলেছেন। এই বিষয়ে মিন্টুর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বক্সিরহাট ৩৫নং কাউন্সিলর হাজী নুরুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কখনো আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না এবং মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাও নন। জানতে চাইলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ বাহাদুর বলেন, হাজী নুরুল হক কখনো আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না এবং তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাও নন। মনোনয়ন ফরমে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়েছেন- তা ভুয়া।

এদিকে সংরক্ষিত মহিলা (৯, ১০ ও ১৩নং) ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আবিদা আজাদের পরিবর্তে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য তছলিমা বেগম নুরজাহান মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন না। জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, নগর আওয়ামী লীগে মহিলা সদস্য আছে একজন। তিনি হচ্ছেন- জুবাইদা নার্গিস। আমার জানা মতে, তছলিমা বেগম নুরজাহান নামে কোনো মহিলা সদস্য নেই।

অন্যদিকে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলরপ্রার্থী ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অসামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত, মাদক, সন্ত্রাস এবং কিশোর গ্যাং পরিচালনাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরাবরে লিখিত পত্র দিয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সার মালিক জানিয়েছেন, আমাদের ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে জানতে পারবেন ওয়াসিম অসামাজিক ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত। কাউন্সিলরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে যাকে নিয়ে গুরুতর অভিযোগ এলাকায় প্রমাণিত। এছাড়াও খুলশী থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী তাকে প্রার্থী হিসেবে চায় না। সুতরাং তৃণমূলের মতামত প্রতিফলিত না হলে এখানে আমিসহ আরো অনেকে নির্বাচন করবো।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হয়তো তা নয়। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কাউন্সিলরদের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন বোর্ডকে সুপারিশ করবে। নগর আওয়ামী লীগের সুপারিশের ভিত্তিতে হয়তো কাউন্সিলর প্রার্থীর তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে।

এদিকে বিতর্কিত কাউন্সিলরদের বাদ দিতে ইতোমধ্যে নগরের একাধিক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আবার অনেকেই ক্ষোভপ্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। বিতর্কিত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কেন্দ্রে চিঠিও পাঠাবে তারা।

নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের কাগজপত্র আবার যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হবে।