দলের কর্মী নয় বিদ্রোহীরা কেউই, এরা সবাই বেঈমান - আহমদ হোসেন

দলের কর্মী নয় বিদ্রোহীরা কেউই, এরা সবাই বেঈমান - আহমদ হোসেন
দলের কর্মী নয় বিদ্রোহীরা কেউই, এরা সবাই বেঈমান - আহমদ হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

নগর আওয়ামী লীগের টালমাটাল অবস্থা । চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের দমাতে পারছেনা কোনভাবে । কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এসেছেন চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতায় যারা আছেন তাদের বহিষ্কারের পক্ষে মতামত তুলে ধরেছেন তিনিও। গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মকান্ড ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রামে থাকাবস্থায় প্রচারণা চালাবো, নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবো। ভোটারদের দুয়ারে যাবো। সবকিছু বুঝেই নেতাদের সাথে বসবো। এসময় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বার্তা দিব। এই বার্তা হলো- ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বিদ্রোহীদের বর্জন করতে হবে। মেয়রের বিজয়ের ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরতে হবে। ১২ বছরে বাংলাদেশ কতদূর এগিয়েছে তা তুলে ধরতে হবে। উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। সন্ত্রাসমুক্ত, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ও মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আমাদের কাছে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে আমাদের অবশ্যই জিততে হবে। জেতার জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আমরা পরাজিত হতে আসেনি। জনগণের ভোটে বিজয়ী হতে হবে।

চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আহমদ হোসেন বলেন, বিদ্রোহীরা আমাদের দলের কর্মী না। আমাদের নেতাকর্মী না। এরা বেঈমান, মোনাফেক। কাজেই আমি যেমন খুনি মোস্তাক, খুনি জিয়াকে ঘৃণা করি তেমনি এই বিদ্রোহীরা আমাদের কাছে জিয়া, মোস্তাকের মতো ঘৃণার পাত্র। তাদের সবাইকে ঘৃণা করতে হবে। তারা আমাদের পার্টির শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। তারা আমার নেত্রীর নির্দেশনা অমান্য করেছে। তাদের শুধু বহিষ্কার নয়, ঘৃণাও করতে হবে।
বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি সুপারিশের চিঠি রেডি হয়েছে। চিঠিটা তারা পাঠিয়েছে। বহিষ্কারের একটি সিস্টেম আছে। কেন্দ্রীয় কমিটিকে বসতে হয়। কোভিডের জন্য আমরা বসতে পারছি না। হয়তো জরুরি ভিত্তিতে এরমধ্যে বসতেও হতে পারে। সভাপতি চাইলে সেটা সম্ভব। সভাপতি বিশেষ ক্ষমতাবলে বহিষ্কার করে দিতে পারেন। আমি এখান থেকে যাওয়ার পর সভাপতিকে সার্বিক পরিস্থিতি জানাবো। এও বলতে পারি, এখনই তাদের বহিষ্কার করতে। বহিষ্কার হলে একটা বার্তা যাবে। যে বিদ্রোহী হবে তার রক্ষা নেই। বিদ্রোহীদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করবে তাদেরকেও বহিষ্কার করতে হবে।

গঠনতন্ত্রে বহিষ্কারের আগে শোকজ করার বিষয়টি উল্লেখ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বিদ্রোহী, এরাই স্বতন্ত্র। দলের সিদ্ধান্ত যে লঙ্ঘন করেছে তার ক্ষেত্রে আবার গঠনতন্ত্র কিসের। যে পার্টির গঠনতন্ত্র মানে না, শৃঙ্খলা মানে না, হাইকমান্ডের নির্দেশনা মানে না তার জন্য গঠনতন্ত্র কোনো কাজে আসবে না। তার ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানার দরকার নাই। এমনো হতে পারে তাকে শোকজ না করে সরাসরি বহিষ্কার করা হবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের বিষয়টি তুলে ধরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, মহানগরের নেতারা তদন্ত করে দেখেছেন কারা বিদ্রোহী। তারা যে সুপারিশ পাঠাবেন সেটাই কার্যকর হবে। মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি বৈঠক করে ঐক্যমতে পৌঁছেছে যে এই মুহূর্তে তাদের বহিষ্কার করা প্রয়োজন। মহানগর আওয়ামী লীগের প্রস্তাব নেত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বিবেচনায় নিবে।

চলমান পৌরসভা নির্বাচনেও বিদ্রোহীদের বিষয়ে একই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে জানিয়ে আহমদ হোসেন বলেন, বিদ্রোহীদের বিষয়ে সিদ্ধান্তটা শুধু চট্টগ্রামের জন্য না। বিদ্রোহী যেখানে সেখানেই বহিষ্কার। এটা পৌরসভা হোক, চসিক নির্বাচন হোক। বিদ্রোহীরা সারাবছর বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার পক্ষে ¯েøাগান দিবে, নির্বাচন আসলেই বিদ্রোহ করবে। আওয়ামী লীগে এমন কর্মীর দরকার নাই।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি মিথ্যাচারের পার্টি। তারা মিথ্যা কথা বানিয়ে বানিয়ে বলে। আমরা তাদের কাছে এমন কোনো সুযোগ রাখবো না যে কোনো কারণে যেন পরাজিত হতে হয়। এই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচন ভালো হয়। নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্বাচন করবে, আমরা সেখানে হস্তক্ষেপ করবো না। ইসি স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে। এবার চসিকে নির্বাচন হবে ইভিএমে। এটি একটি টেকনিক্যাল বিষয়। কিভাবে ইভিএমে ভোট দিতে হয় সেটি সবাইকে শিখাতে হবে।

দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের যে উন্নয়ন করেছে তার জন্য অবশ্যই ভোট পেতে পারে। এরপরেও জনগণ যদি মনে করে বিএনপি জনগণের টাকা মেরে দেয়ার পরেও ভোট পাবে, তাহলে দিবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জয়-পরাজয়ে তো আর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে না। কিন্তু আমরা একটা মডেল নির্বাচন চাই। নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাবো যেন মডেল নির্বাচন উপহার দেয়।