দক্ষিণ ইদিলপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিনা বেতনে পড়ছে তিনশ শিক্ষার্থী

দক্ষিণ ইদিলপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিনা বেতনে পড়ছে তিনশ শিক্ষার্থী
দক্ষিণ ইদিলপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিনা বেতনে পড়ছে তিনশ শিক্ষার্থী, ইনসেটে মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম ছবি।

নাহিদ চৌধুরী, বিশেষ প্রতিবেদক।।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী সরকারী নয় অথচ বিনা বেতনেই অধ্যয়ন করছে । এমনকি প্রতিবছর বিনামূল্যে শিক্ষা সামগ্রীও প্রদান করা হয় প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীকে। অবিশ্বাস্য এমন এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম দক্ষিণ ইদিলপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম প্রাথমিক বিদ্যালয়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পৌরসভাস্থ দক্ষিণ ইদিলপুর গ্রামে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে।

জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে বিদ্যালয়টি চালু হলেও জমির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতায় থমকে যায় এর অগ্রগতি। দীর্ঘ ১০ বছরেও এ সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব বদিউল আলমের উদারতায় ভাগ্য খোলে প্রতিষ্ঠানটির। ওই বছর তিনি নিজ অর্থে ব্যয়বহুল ১৮ শতক জমি ক্রয় করে বিদ্যালয়ের নামে লিখে দিলে রাতারাতি এর জড়াজীর্ণ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এরপর মেয়র ও কাউন্সিলরগণের সর্বসম্মতিক্রমে বিদ্যালয় পরিচালনার ভার পৌরসভায় ন্যাস্ত করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সুষ্ঠ পরিচালনা ও নিয়মিত বেতন/ভাতা প্রাপ্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন কর্মরত শিক্ষকরাও।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ ইদিলপুরে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে। কিন্তু নানান জটিলতায় বিদ্যালয় পরিচালনায় হিমশিম খেতে হয় আমাদেরকে। অবশেষে বর্তমান মেয়র বদিউল আলমের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা ও শিক্ষকদের বেতন/ভাতাসহ সকল জটিলতার অবসান ঘটেছে।

ইদিলপুরের বাসিন্দা ও সীতাকুণ্ড বাজার কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অজয় পাল নান্টু বলেন, জমির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা না মিটলে দক্ষিণ ইদিলপুরের একমাত্র এই শিশু বিদ্যাপিঠটি রক্ষা করা সম্ভব হতো না।

এদিকে বিদ্যালয়ে যথাযথ পাঠদানের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও। চতুর্থ শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর পিতা আবুল কাশেম জানিয়েছেন শুরু থেকে তার সন্তানের পড়ালেখায় বিদ্যালয়ের পাঠদানেই সন্তুষ্ট তিনি। কারন হিসেবে গৃহশিক্ষক ছাড়াই তার ছেলের ভাল ফলাফলের কথা তুলে ধরেন আবুল কাশেম।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইদিলপুরের নব-নির্মিত প্রশস্ত রাস্তার উত্তর পাশে পশ্চিম-দক্ষিণমূখী বিদ্যালয়ের আধা-পাকা টিনসেড ভবন। শ্রেণীকক্ষের সামনে বিশাল খেলার মাঠ ও উম্মুক্ত পরিবেশ। নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে পাঠদান চলছে বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে। খয়েরি রংয়ের স্কুল ড্রেস পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীদের সুশৃঙ্খল পাঠগ্রহণের দৃশ্য ছিল সত্যিই মনোমুগ্ধকর। শিক্ষকদের পাঠদানেও ছিল হাস্যোজ্জ্বল কোমলতা। এসময় কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালাউদ্দীন হাসানের সাথে যিনি নিজেও স্বেচ্ছাশ্রমে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ার কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তার মতে, দীর্ঘদিন পর হলেও অত্র এলাকার একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আলোর মুখ দেখেছে। এজন্য আমরা মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম ও তার পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি শুধু বিদ্যালয়ের নামে জমিই দান করেননি এর সুষ্ঠ পরিচালনার সব দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন।

সালাউদ্দীন হাসান বলেন, বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে তিনশ ছাত্র/ছাত্রী রয়েছে। যাদের সবাই বিনা বেতনে পড়ালেখা করছে। এছাড়া মেয়রের জৈষ্ঠ পুত্র লন্ডন প্রবাসী মাসুম সামজাদ প্রতিবছরের শুরুতে শিশুদের শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করে থাকেন। আসছে জানুয়ারীতে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে স্কুল ড্রেস ও ব্যাগ প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন।

মেয়র বদিউল আলম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিতকরণের ভিশন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আমি এ পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। বিশেষ করে পৌরসদরের ওয়ার্ড হলেও ইদিলপুর ছিল অনেকাংশে অবহেলিত ও অনুন্নত এলাকা। পৌরসভা ঘোষণার প্রায় দেড় যুগ পড়েও এ ওয়ার্ডের প্রধান সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবে এলাকার একমাত্র প্রাইমেরী স্কুলটিতে যাতায়াতেও শিশুদেরকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো।

এছাড়া জমির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতায় বিদ্যালয়টি সরকারীকরণে কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে শিক্ষকদের বেতন/ভাতাও ছিল অনিয়মিত। সব মিলিয়ে এক প্রকার ঝিমিয়ে পড়েছিল দক্ষিণ ইদিলপুরের এই একমাত্র বিদ্যাপিঠ।

তিনি বলেন, আমি মেয়রের দায়িত্ব হাতে নেয়ার পর চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যায়বহুল এই ইদিলপুর সড়ক পূন:নির্মাণের কাজে হাত দেই। যার কাজ ইতিমধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ে। একই সাথে আমার নিজ অর্থ ব্যয়ে জমি ক্রয় করে বিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর করি। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পরিচালনা দায়িত্ব ভার পৌরসভাকে ন্যাস্ত করা হয়।

মেয়র বলেন, এর আগেও একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় পৌরসভার পক্ষ থেকে পরিচালনা করা হয়েছিল। বর্তমানে সেগুলো সরকারীকরণ হওয়ায় এই দক্ষিণ ইদিলপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম প্রাথমিক বিদ্যালয় পৌরসভার বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকার নতুন করে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের উদ্যোগ নিলে আশা করছি আমরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবো না।