তেল চোর সিন্ডিকেট কর্ণফুলীতে সক্রিয় , সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব

এস.এম.পিন্টু, ।।

তেল চোর সিন্ডিকেট কর্ণফুলীতে সক্রিয় , সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব
তেল চোর সিন্ডিকেট কর্ণফুলীতে সক্রিয় , সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব

একটি তেল চোর সিন্ডিকেট চট্টগ্রামে কর্ণফুলীতে সক্রিয় রয়েছে । এই চক্রটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পদ্মা মেঘনা যমুনা এশিয়াটিকসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার তেল চুরি করে অবৈধ পন্থায় রাতারাতি বনে যাচ্ছেন কোটিপতি  অন্যদিকে সরকারের গচ্ছা যাচ্ছে বিশাল অংকের টাকা। ক্ষতির এই টাকা পুরণ করতে বাড়াতে হচ্ছে জ্বালনির দাম যার প্রভাব পড়ে নিত্যপণের উপর ফলে বাজার হয়ে উঠে উর্ধ্বমুখী বিপাকে পড়ে সাধারণ জনগণ। শুরু হয় নানা আলোচনা সমালোচনা নষ্ট হয় সরকারের ভাবমুর্তি।

এই নেক্কারজনক কাজে যারা জড়িত রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হল, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল শুক্কুর প্রকাশ ডাকাত শুক্কুর, মো. ইউনুস, মো. ইলিয়াছ, আলি আহমেদ, মো. সেলিম, জানে আলম, সোর্স মো. জহুর, মো. নাছির, সোর্স মো. ইউসুফ, মো. জাফর, মনির আহমেদ, মো. তাহের, মুহাম্মদ কায়সার ,আব্দুল মন্নান, মো. মুছা, মো. হাসান, মো.ইসমাঈলসহ আরো কয়েক জন।

ইচ্ছাকৃতভাবে সরকার ও জনসাধারণকে বিপাকে ফেলার জন্য এই চোর চক্রটি ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছে একটি সিন্ডিকেট যেখানে সরকার দলীয় একাধীক প্রভাবশালী নেতা বিপিসির অধীনস্থ পদ্মা মেঘনা যমুনাসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানধীন জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একাধীক কর্মকর্তা ও কর্মচারীও।

আর এসব দেখবালের দায়িত্বে থাকা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালালে চোরাই তেলসহ মাঝি ও শ্রকিরা মাঝে মাঝে ধরা পড়লেও চোরাকারবারী গডফাদাররা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

জানা যায়  এসব তেল চোরাকারবারীদের সবচেয়ে বড় আস্তানা রয়েছে জুলধা ইউনিয়নের ডাঙ্গারচর ৯ নং ঘাটে।  সেখানে তেল কোম্পানী পদ্মা, মেঘনা, যমুনার পাইপ ছিদ্র করে  প্রতিদিন রাতে বিপুল পরিমাণ তেল সেখানে মজুদ করা হয়। এবং ছোট ছোট স্পীডবোট ও নৌকাযোগে ঐতেল নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যায়। এসব অপকমের্র মূল সহায়তাকারী হিসেবে তেল কোম্পানিগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিও জড়িত থাকেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও এই চক্রটি দেশীয় লাইটারেজ জাহাজ ও বিদেশি তেলের জাহাজ থেকেও টলিযোগে তেল চুরি করে তাদের নিজস্ব তেলের ডিপোতে মজুদ করেন। পরে এসব চোরাই তেল চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের অবৈধ দোকান ও বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহ করা হয়।

যেসব  জাহাজ হতে তেল চুরি হচ্ছে বলে নাম এসেছে এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-রাজা শাহ সিটি জাহাজ,শবনম -২,শবনম-৩,শবনম -৪, সিটি-৪, সিটি -৭,সিটি-৯, পদ্মা ১৩-১৪-১৫, রবিন জাহাজ, যমুনা ১৩-১৪-১৫, পিপলস -১, পিপলস-২, যমুনা -১৭, ফ্রেশ ১৬-১৮-১৯-৩১ ইত্যাদি।

অপর একশ্রেনির চোরাকারবারী আছে যারা সরাসরি ডিপো থেকে তেল চুরি করে থাকেন দেখা যায় ৫ হাজার লিটারের ডিও করে ১০ হাজার লিটার ডেলিভারী নেয় আবার অনেকে ডিওর চেয়ে ডেলিভারী কম নেয় এর মাঝখানে থাকে অনেক বড় রহস্য গড়মিল ঘটে অবৈধ টাকার লেনদেনও। এভাবে চুরি হয়ে যায় হাজার হাজার লিটার তেল। সে ক্ষেত্রে ঐ কোম্পানির কতিপয় সুযোগ সন্ধানী কর্মকর্তা কর্মচারী সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন এই চুরির সাথে। এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, ঘাটে ঘাটে পয়সা দিয়ে দিনে ১০ লাখ টাকার সরকারি তেল চুরি করছে এসব সিন্ডিকেট। তবে মাঝে মাঝে ২/১টি সফল অভিযানও করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন। তবে এগুলোর মাঝে দুদকের কোন মাথা ব্যথা নেই বলেই মনে হয়।

কর্ণফুলী  নদীতে খেয়া পারাপারের কাজে নিয়োজিত  একাধীক নৌকার মাঝি ও ঘাটশ্রমিকের সাথে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান এরা শুধু তেলই চুরি করেনা রাতের আধারে তেল চুরির আড়ালে বিভিন্ন মাদক, বিয়ারসহ বিদেশি চোরাই পণ্য খালাস করে থাকে। তবে এদের হাত অনেক লম্বা,প্রত্যেকেরই নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী ছাড়াও এদের রয়েছে  দলীয় প্রসাশনিক ক্যাডার বাহিনী। যার ফলে এদের বিরূদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস করবেনা কেউ।

অপর একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, প্রতিটি ঘাটের প্রশাসন তাদের  সিন্ডিকেটের  নিয়ন্ত্রণে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রশাসনকে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা বিতরণ কওে থাকে। যার একটি অংশ, চট্টগ্রাম শহরের  প্রভাবশালী এক নেতা, বন্দর এলাকার হর্তাকর্তা, এপিএস খ্যাত তিন ব্যক্তি, দলীয় পদে থাকা কর্ণফুলী, বন্দর ও ইপিজেড এলাকার কয়েকজন নেতাকর্মী ছাড়াও গণমাধ্যমের কতিপয় পথভ্রষ্ট সাংবাদিক এই অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সুত্র জানায়, প্রতি মাসে শহরের আগ্রাবাদের একটি বিলাস বহুল হোটেল ও পতেঙ্গা  বোট ক্লাবে ক্ষমতাসীন দলের পদে থাকা নেতাদের নিয়ে বিলাসি আড্ডার ফাঁকে মাসোয়ারার হিসাবটি মিটিয়ে নেওয়া হয়।

এব্যপারে  মেসার্স আব্দুল মুক্কুর এন্ড সন্স এর সত্ত্বাধিকারী মোঃ আব্দুল শুক্কুর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন আমি ব্যবসা করি তবে কোন চোরাকারবারী করিনা। আমার জমিজমা নিয়ে এলাকার লোকের সাথে কিছু ঝামেলা আছে তাঁরা হয়তো আপনাবে ভুল বুঝাতে পারে।   

এব্যপারে বাংলাদেশ পেট্রালিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)র সচিব কাজী মোহাম্মদ হাসান বলেন এই ধরনের চোরাকারবারীদের কারনে বিপিসির অনেক ক্ষতি হচ্ছে এসব অপকর্মে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হওয়া উচিত।

লেখক : চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান , দৈনিক সকালের সময় ।