ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অবমুক্তকৃত স্মারক ডাকটিকেট নিয়ে সমালোচনার ঝড়

ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অবমুক্তকৃত স্মারক ডাকটিকেট নিয়ে সমালোচনার ঝড়
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অবমুক্তকৃত স্মারক ডাকটিকেট নিয়ে সমালোচনার ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ডাক বিভাগ।

ডাকটিকেটের ওপর লিখেছে ‘৪ জানুয়ারি ২০২১, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সর্বত্র তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৪ জানুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডাক ভবনে ডাক অধিদফতরের আয়োজনে ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত এবং বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিযুক্ত এই উদ্বোধনী খামে লেখা আছে ‘৪ জানুয়ারি ২০২১, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’। এটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ব্যাপক সমালোচনা করছেন অনেকে। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গণমাধ্যমকে বলছেন, ডাকটিকেটে ইতিহাসের সত্যটা তুলে ধরা হয়। এতে কোনো পরিবর্তন করা যায় না। মন্ত্রী পাল্টা সমালোচনকারীদের সত্যকে মোকাবিলা করতে বলেছেন।

এদিকে ছবিযুক্ত উদ্বোধনী খামের ছবি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পোস্ট করেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সেখানে সমালোচনা করে মন্তব্য করেন অনেকে। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। মুসলিম শব্দটা বহু আগে ছাত্রলীগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে এই শব্দ সংযোজনের কারণ কী? আমরা কি পাকিস্তানে ফিরে যাচ্ছি?’

এই মন্তব্যের জবাবে মন্ত্রী লিখেছেন, ‘ডাকটিকেট ইতিহাসকে ধারণ করে। ভাবুন, যদি লিখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন তবে কতটা সত্য আপনার নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন? মুসলিম লেখায় সাম্প্রদায়িকতা নেই তখনকার প্রয়োজন ছিল, এটা বঙ্গবন্ধু জানতেন। পরে তিনিই বাদ দেন। আমরা পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ করিনি? ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হীনম্মন্যতা ও অপরাধ। সত্য যা, তাকে মোকাবিলা করুন।’

জাহিদুর রহমান নামে আরেকজন মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘এটা ভুল নয়, ধৃষ্টতা। সুস্পষ্ট ইতিহাস বিকৃত। এটি নিয়ে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। আপনি মুক্তিযোদ্ধা কিংবা প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা যেই হোন না কেন, বর্তমানে যা করে যাচ্ছেন সেটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ৩০ লাখ বাঙালি জীবন দিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানকে স্মরণ করার জন্য নয়। আপনি যে এই কাজটি মৌলবাদী অপশক্তিকে খুশি করার জন্য করেননি, সেটা বোঝার উপায় কী?’

প্রেস ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ তার ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে লেখেন, ছাত্রলীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান শব্দটি ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে ক্রমশ অপস্রিয়মাণ হয়ে আসে। একাত্তরে পুরোপুরি মুছে যায়। কিন্তু যেসব নেতাকর্মী পূর্ব পাকিস্তানকালের, তারা সেই ধারা বহন করতেই পারেন অন্তরঙ্গে। তার প্রতিফলন যে ঘটানো হবে ডাকটিকেটে, তা বিস্ময়কর বৈকি। ওই শব্দটি মুছে গেলে তাদের নামগন্ধ মুছে যেতে পারে, সেই আশঙ্কায়ও হয়তো। তা হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ জুনে ৭২ বছর পালন করবে? তা হলে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পালনের কী হবে? গোলমাল লাগছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ হলেও এখন সংগঠনটির নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।