চট্টগ্রামের চার ক্লাবে অভিযান

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চট্টগ্রামের চার ক্লাবে অভিযান

সকল ধরনের জুয়ার আসর বন্ধের নির্দেশনার পর দ্বিতীয় দিনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ক্লাবে পৃথক অভিযান চালিয়ে সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব।

অভিযানে যেসব ক্লাবগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হল আইস ফ্যাক্টরি রোডে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, সদরঘাট রোডে মোহামেডান ও হালিশহর আবাহনী ক্লাব এবং কাজীর দেউড়ি সংলগ্ন ফ্রেন্ডস ক্লাব।

অভিযানে ক্লাবগুলোর ভেতর থেকে জুয়ার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ওইসব ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। তবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে জুয়া পরিচালনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানানো হয়। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ওইসব ক্লাবগুলোতে অভিযান চালানো হয়। সন্ধ্যা থেকে একই সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, মোহামেডান ও আবাহনী ঘিরে রাখার পর সেগুলোতে অভিযান শুরু করে র‌্যাবের পৃথক টিম।

মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজামুদ্দীন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ক্লাবটিতে জুয়া খেলার প্রমাণ মিলেছে। অভিযানে ক্লাবটি থেকে প্লে-কার্ড, জুয়ার গুটি ও বোর্ড জব্দ করা হয়েছে। কিছু জুয়ার সরঞ্জাম পাওয়া গেছে যেগুলো দিয়ে এখানে ক্যাসিনোর মতো খেলা হত। এছাড়া দুটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। নিজামুদ্দীন বলেন, তবে এখান থেকে জুয়ার আরও আলামত আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সরিয়ে নেওয়া আলামতগুলো জব্দ করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হবে জানিয়ে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট জানান, জুয়া খেলা পরিচালনার সাথে কারা জড়িত, তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হবে। র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে জুয়ার আসর বসে এমন খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালাই। অভিযানের সময় ক্রীড়া চক্রের কার্যালয় তালাবদ্ধ দেখতে পাই। পরে সেখানকার একজন নিরাপত্তাকর্মীর সহায়তায় তালা ভেঙে আমরা ভেতরে প্রবেশ করি।

র‌্যাবের অভিযান চলাকালে একটি সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের নির্বাহী কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খোরশেদ আলম। তিনি দাবি করেন, ওই সংসদটির কার্যালয় তারা ৪ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছিলেন। এজন্য প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে তাদের পরিশোধ করতে হত ইজারাদারদের। কার্যালয়টি মূলত বিভিন্ন সময়ে ছেলেরা এসে তাস খেলে থাকে। কিন্তু এখানে জুয়া খেলার বিষয়টি তারা জানেন না বলে জানান খোরশেদ আলম।

গত ৬ মাস হয়েছে ক্লাবটির ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদটির ক্লাবটিতে দেয়ালে ঝুলতে দেখা যায় ওখানকার কর্মকর্তাদের একটি তালিকা। ওই তালিকায় সভাপতি হিসেবে নাম রয়েছে হারুন উর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক একে এ সরোয়ার কামাল, সদস্য সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, মাহাবুবুল আলম চৌধুরী ও খোরশেদ আলম।

জানা গেছে, এই ক্লাব পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হারুন-আর-রশিদ। খোরশেদ আলম বলেন, আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট ক্লাবটি পরিচালনা করত। বছর তিনেক আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ক্লাবটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। খসরু নামে একজনকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকায় ক্লাবটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বেশ কিছু দিন ধরে বৃষ্টি হলে পেছনের নালা দিয়ে ক্লাবে পানি ঢোকে।

মেরামত করার জন্য ফান্ডে পর্যাপ্ত টাকা নেই। সে কারণে এটা অমেরামত অবস্থায় পড়ে আছে। ক্লাবটি মেরামত করে না দেওয়ায় ছয় মাস আগে চুক্তি শেষ হওয়ার পর আর নবায়ন হয়নি বলে জানান খোরশেদ। এরপর কয়েক মাস ধরে এখানে আর কার্ড খেলা হয় না। অনেকদিন হচ্ছে এটা বন্ধ আছে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের ওই ক্লাবটির বিভিন্ন কক্ষ একটি নর্দমার মতো থাকতে দেখা যায়। ওইসময় বিভিন্ন কক্ষের কিছু সরঞ্জাম ওই নর্দমার পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় ছিল। তবে বিভিন্ন কক্ষে টিভি, বিদ্যুৎ লাইন, সিসিটিভি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিঙ সরঞ্জাম সচল থাকতে দেখা যায়। এদিকে একই সময় সদরঘাটে মোহামেডান ও আবাহনী ক্লাবগুলো থেকে বিভিন্ন প্লে-কার্ডসহ জুয়ার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট জানান প্রত্যেক ক্লাবের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করা হবে। গতকাল রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত র‌্যাবের পক্ষ থেমে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের কমিটির লোকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াধীন ছিল।

জানা গেছে, হালিশহরে আবাহনী ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি হিসেবে রয়েছে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন একই দলের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। অন্যদিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি শাহ আলম বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন শাহবুদ্দিন শামীম। এরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এদিকে র‌্যাবের অভিযানের পর নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ কমিশনার মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম কাজীর দেউড়িতে অবস্থিত ফ্রেন্ডস ক্লাবে অভিযান চালিয়েছিল। তবে অভিযানে ক্লাবটির ভেতর থেকে জুয়া খেলার কোনো সারঞ্জাম পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। এর আগে শুক্রবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে জুয়াবিরোধী অভিযান চালানো হয়। নগরীর আলমাস মোড়ে ‘হ্যাং আউট’ নামের একটি ক্লাবে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে অনুমতি ছাড়া পুল ও স্নুকার খেলা হত, ওইসময় ক্লাব মালিকের ছেলে খলিকুজ্জামান ও কর্মচারী রবিউল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার জামিনে মুক্তি পান তারা।