গণপরিবহনের ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

গণপরিবহনের ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

পোস্টকার্ড ডেস্ক।।

প্রাণঘাতী করোনাকালীন গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। আজ রোববার এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও তা কমিয়ে ৬০ শতাংশ করে মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৪ এর ২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে করোনাভাইরাসজনিত রোগের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধকল্পে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে সরকার আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লায় চলাচলকারী (ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরসহ) বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া নিম্নোক্তভাবে পুনর্নির্ধারণ করল।

(ক) আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা রুটে বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০১৬ সালের ৩ মে প্রজ্ঞাপনমূলে উল্লিখিত বিদ্যমান ভাড়ার (যাত্রীপ্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ১.৪২ টাকা) ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলো।

(খ) ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত বিদ্যমান ভাড়ার (ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটার যথাক্রমে ১.৭০ টাকা ও ১.৬০ টাকা। বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়ার বিদ্যমান হার ৭ টাকা ও ৫ টাকা) ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি।

(গ) ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাস উভয় ক্ষেত্রে ভাড়ার হার প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটার ১.৬০ টাকার ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি।

এর আগে শনিবার করোনাভাইরাসের কারণে অর্ধেক সিট খালি রাখার শর্তে বাস-মিনিবাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভাড়া নির্ধারণ কমিটি। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান ইউছুব আলী মোল্লা। তিনি জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাসে অর্ধেক সিট খালি রাখা হবে। তাই সমন্বয় করতেই ভাড়া ৮০ ভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বৈঠকে মালিক শ্রমিক প্রতিনিধি, ডিটিসিএ কর্মকর্তা, ক্যাব প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বাস মালিক পক্ষ ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দেন। বিআরটিএ চেয়ারম্যান জানান, ৫০ ভাগ সিট খালি রাখায় বাস মালিকরা লোকসানে পড়বেন। তারা ভাড়া শত ভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কমিটির সকলের উপস্থিতিতে ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

করোনার বিস্তার রোধে গত ২৫ মার্চ থেকে বাস, লঞ্চ, ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। রোববার থেকে ট্রেন ও লঞ্চ চালু হচ্ছে। পরদিন থেকে চলবে বাস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি কমিটি গণপরিবহন ও ট্রেনে যাত্রী পরিবহনে ১৪ শর্ত দিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছিল। তা সমন্বয় করে ১১ শর্তে বাস চালানোর অনুমতি দিয়েছে বিআরটিএ।

এগুলো হলো- বাস টার্মিনালে ভিড় করা যাবে না, তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে লাইন ধরে টিকিট কাটতে হবে, বাসে উঠার আগে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও হাত ধুতে হবে, বাসে স্যানিটাইজার রাখতে হবে, দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া যাবে না, ৫০ ভাগ আসন ফাঁকা রাখতে হবে,

চালক শ্রমিক ও যাত্রীকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, যাত্রার আগে ও পরে বাস জীবাণুমুক্ত করতে হবে, চালক-শ্রমিককে একটানা ডিউটি দেওয়া যাবে না, মহাসড়কে বিরতি দেওয়া যাবে না এবং মালামাল জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে দূরপাল্লার ৪০ আসনের বাসে সর্বোচ্চ ২০ জন যাত্রী নেওয়া হবে। নগর পরিবহনে ৩২ আসনের মিনিবাসে ১৬ জন এবং ৫২ আসনের বাসে ২৬ জন যাত্রী নেওয়া যাবে। এ কারণে ভাড়াও বাড়বে। যে রুটে আগে ১০০ টাকা ভাড়া ছিল তা সোমবার থেকে হতে পারে ১৮০ টাকা।