গণপরিবহনে এখনো বাড়তি ভাড়া

গণপরিবহনে এখনো বাড়তি ভাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। 

গত ২৯ আগস্ট পূর্বের ভাড়ায় গণপরিবহন চালানোর আদেশ দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। গতকাল ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, নির্দেশ মানছে না গণপরিবহনগুলো। বাড়তি ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি বাদুড়ঝোলা হয়ে গণপরিবহনে যাচ্ছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানার ইচ্ছে নেই চালক-হেলপার, এমনকি যাত্রীদের মাঝেও। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ঠেকাতে পারছে না প্রশাসন।

পরিবহন নেতারা বলছেন, পরিবহন শ্রমিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে। ভাড়া নৈরাজ্য রোধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি যাত্রীদের। এ প্রসঙ্গে সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) মো. শহীদুল্লাহ বলেছেন, পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে বার বার বৈঠক করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইভাবে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারবে না। যদি এর অন্যথা হয়, অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।

করোনা মহামারীতে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে গণপরিবহন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। শর্ত ছিল, গাড়িতে জীবাণু নাশক রাখতে হবে, যাত্রী-চালক-হেলপার সবাই মাস্ক পরবে, দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা যাবে না, পাশের একটি আসন খালি রেখে যাত্রীরা বসবে। ভাড়া গুনতে হবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৬০% বেশি। কিন্তু এর কোনোটি যথাযথভাবে মানেননি চালক-হেলপাররা। বাড়তি ৬০% থেকেও বেশি ভাড়া আদায়ের দিকেই তাদের ঝোঁক ছিল। এ অবস্থায় ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। ফলে এক পর্যায়ে সরকার ২৯ আগস্ট বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে নেয়। গতকাল থেকে তা কার্যকর করা হয়। সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরোটাই ভিন্ন।

ভুক্তভোগীরা বলেছেন, এসব দেখার কেউ নেই। গণপরিবহন ভাড়া জনগণের জন্য বাড়তি বোঝা হলেও স্বাস্থ্যবিধির জন্য তা মেনে নিয়েছিল যাত্রীরা। কিন্তু এখন তো যাত্রীও তোলা হচ্ছে সমান তালে, ভাড়াও কমানো হচ্ছে না। ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বাকবিতণ্ডা লেগে রয়েছে।

নগরীর আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, চকবাজার, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাস, টেম্পো হিউম্যান হলার কোনো পরিবহনেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। পূর্ব নির্ধারিত নিয়মে ভাড়া আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হলেও করোনাকালীন আদায় করা ভাড়া গতকালও অব্যাহত ছিল। বাসে বহদ্দারহাট থেকে নতুন ব্রিজ (শাহ আমানত ব্রিজ) পর্যন্ত ভাড়া ছিল জনপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা। মাহিন্দ্রায় জনপ্রতি ভাড়া ছিল ৮ টাকা। এখনো জনপ্রতি বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ টাকা। মাহিন্দ্রায় জনপ্রতি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এছাড়া কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে ২ নম্বর গেটের ভাড়া ছিল ৮ টাকা। ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে ২০ টাকাও দাবি করা হচ্ছে।

রানা নামে এক যাত্রী গতকাল বলেন, আগ্রাবাদ থেকে বাড়তি ভাড়ায় নিউ মার্কেট আসি। সেখান থেকে বহদ্দারহাটে যেতে বাসে উঠি। উঠে দেখি, সব যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে হেলপার। তিনি জানান, করোনার আগে নিউ মার্কেট থেকে বহদ্দারহাটের ভাড়া ছিল ৭ টাকা। এখন নিচ্ছে ১৫ টাকা। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করেই তারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে।

লালখান বাজার মোড়ে কথা হয় কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে আসা মিঠু'র সাথে। তিনি বলেন, কথা ছিল যত আসন তত যাত্রী নেবে। কিন্তু লোকাল বাসগুলোর দরজার কাছে অনেক যাত্রীকে দেখেছি দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া যাত্রী তোলা ও ওভারটেক করার ব্যাপারে বাসগুলোর মধ্যে অসম প্রতিযোগিতাও রয়েছে।

আরেকজন যাত্রী দিলীপ বলেন, এখন নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিজের ওপর। বাসে নিজেকেই সচেতন থাকতে হচ্ছে।

মোহাম্মদ মানিক নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, এক সিটে দুজন যাত্রী ছাড়াও দাঁড় করিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ভাড়াও নিচ্ছে বেশি। প্রতিবাদ করলে হেনস্তার শিকার হতে হয়।

স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে ৪ নম্বর রুটের বাসের হেলপার ফারুক জানান, সচেতনতা যার যার। কেউ কাউকে বলে সচেতন করতে পারবে না। যাদের বাসে ওঠা প্রয়োজন তারা যেভাবে হোক বাসে উঠে গন্তব্যে যাবে। আর কেউ বেশি সচেতন হলে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে যাবে।