কৃষ্ণাঙ্গ না শ্বেতাঙ্গ ছিল প্রাচীন মিশরীয়রা ? 

কৃষ্ণাঙ্গ না শ্বেতাঙ্গ ছিল প্রাচীন মিশরীয়রা ? 
কৃষ্ণাঙ্গ না শ্বেতাঙ্গ ছিল প্রাচীন মিশরীয়রা ? 

পরমেশ্বর রায় অয়ন ।।

বহুদিন ধরে ধারণা ছিল প্রাচীন মিশরীয়রা দেখতে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের অধিবাসীদের মতো। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, মিশরীয়রা অনেকটা শ্বেতাঙ্গদের মতো দেখতে ছিল। তবে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। ফারাও শাসক এবং তার প্রজারা কৃষ্ণাঙ্গ না শ্বেতাঙ্গ ছিল-এ নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই।  

আগে মমির ডিএনএ নির্ণয় ঠিকঠাকভাবে করা যেত না। কিন্তু আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল এই বাধাগুলি অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন যে, প্রাচীন মিশরীয়রা মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল। এর মধ্যে তুরস্ক, ইরাক, ইসরায়েল, জর্ডান, সিরিয়া এবং লেবাননের মানুষদের সাথে তাদের ডিএনের বেশি মিল পাওয়া যায়। 

প্রাচীনকালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটসহ গ্রীক, রোমান ও আরবদের অনেকে মিশর জয় করেছিলেন।  গবেষকরা জানতে চেয়েছিলেন,  এর মাধ্যমে মিশরীয়দের বড় জেনেটিক পরিবর্তন ঘটেছিল কিনা। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গ্রুপ লিডার উলফগ্যাং হক একটি প্রেস রিলিজে বলেছেন, আবুসির এল-মেলেক সম্প্রদায়ের জেনেটিক্সের ১,৩০০ বছরের সময়কাল  অধ্যয়ন করে আমরা বড় কোনো বড় পরিবর্তন দেখেনি। এর মানে, জনসংখ্যা জেনেটিক্যালি তেমন প্রভাবিত হয়নি। 

গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের প্রত্নতত্ত্ববিদ জোহানেস ক্রাউস।  তিনি জানিয়েছেন, ঐতিহাসিকভাবে প্রাচীন মিশরীয় মমি থেকে অক্ষত ডিএনএ খুঁজে পেতে সমস্যা হয়েছে। গরম মিশরীয় জলবায়ু, অনেক সমাধিতে উচ্চ মাত্রার আর্দ্রতা এবং মমিকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক পদার্থের কারণে প্রাচীন মমিগুলিতে ডিএনএর দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম।  

ধারণা করা হয়েছিল যে, জেনেটিক উপাদান উদ্ধার করা হলেও তা নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে। তা সত্ত্বেও ক্রাউস এবং সহকর্মীরা শক্তিশালী ডিএনএ সিকোয়েন্সিং এবং প্রাচীন মিশরীয় মমিতে প্রথম সফল জিনোমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন।

ক্রাউস এবং তারা সহকর্মীরা দেখতে পান যে, তারা মোট তিনটি মমি থেকে সম্পূর্ণ জিনোম পেতে পারেন। এই গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা দাঁত, হাড় এবং নরম টিস্যুর নমুনা নিয়েছিলেন। দাঁত ও হাড় সবচেয়ে বেশি ডিএনএ প্রদান করে। তারা নরম টিস্যু দ্বারা সুরক্ষিত ছিল।  গবেষকরা এই নমুনাগুলি জার্মানির একটি ল্যাবে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তারা জীবাণুমুক্ত করার জন্য নমুনাগুলিকে এক ঘন্টার জন্য অতিবেগুনী বিকিরণের অধীনে রাখে। সেখান থেকে তারা ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এই গবেষণায় অবশ্য সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রাপ্ত  জেনেটিক ডেটা মধ্য মিশরের একটি একক সাইট থেকে প্রাপ্ত হয়েছিল। ফলে এটি সমস্ত প্রাচীন মিশরের প্রতিনিধি নাও হতে পারে। 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;