কাল খুলছে বান্দরবানের পর্যটন স্পট

কাল খুলছে বান্দরবানের পর্যটন স্পট
বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স , ছবি. সংগ্রহ

শাহরিয়ার, বান্দরবান ।।

বান্দরবানের সবগুলো ট্যুরিস্ট স্পট এবং আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট খুলে দেয়া হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার ২১ আগস্ট।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম এ ঘোষণা দেন।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মো. ইসলাম বেবী, অতিরিক্ত পুলিশ রেজা সরোয়ার, আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাস, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, ট্যুুরিস্ট পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ নাছিরুল আলম’সহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রশাসন ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানায়, করোনাভাইরাসের প্রভাবে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে বান্দরবান জেলায় শতাধিক ছোট-বড় আবাসিক হোটেলে, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজ দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে একটানা বন্ধ ছিল।

তালা ঝুলানো অবস্থায় ছিল দর্শনীয় স্থান মেঘলা, নীলাচল, চিম্বুক, নীলগিরি, প্রান্তিকলেক, স্বর্ণমন্দির, নীলদিগন্ত, বগালেক, ন্যাচারাল পার্ক’সহ সবগুলো পর্যটন স্পট।

পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হস্থশিল্প, স্থানীয়দের ঐতিহ্যগত বৈচিত্রময় কোমর তাঁতের পোষাক-কাপড়ের ব্যবসা-বাণিজ্যগুলো গত মাসে খুলে দেয়া হলেও পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা ছিল না। দু’শতাধিকের বেশি ট্যুরিস্ট গাড়িও বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন।

তবে সম্প্রতি পরিবহন, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য দোকানগুলো খুলে দেয়া হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যগুলো পর্যটন নির্ভর হওয়ায় জমে উঠেনি।

পর্যটকশূন্য পর্যটন নগরী বান্দরবান জেলাটি যেন প্রাণহীন ছিল দীর্ঘ পাঁচটি মাস। তবে সকল পর্যটন স্পট এবং আবাসিক হোটেল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাঝে।

অপার সম্ভাবনাময় বান্দরবানের দর্শনীয় ট্যুরিস্ট স্পট মেঘলা, নীলাচল, চিম্বুক, নীলগিরি, প্রান্তিকলেক, স্বর্ণমন্দির, নীলদিগন্ত, ন্যাচারাল পার্ক, পাহাড়ের চূড়ায় রুমায় অবস্থিত রহস্যময় প্রাকৃতিক বগালেক, দেশের পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং, বিজয় পাহাড় চূড়া, রিজুক ঝর্ণা, তিনাফ সাইতার ঝর্ণা, জাদীপাই ঝর্ণা, থানচির নীলদিগন্ত, রেমাক্রী, নাফাকুম ঝর্ণা, অমিয়কুম ঝর্ণা, বাদুরগুহা, বড়পাথর, দেবতা পাহাড়, আলীকদমের দামতোয়া ঝর্ণা, পোয়ামুহুরী ঝর্না, আলীর সুরঙ্গপথ, রোয়াংছড়ির দেবতাকুম, শীলবাধাঁ ঝর্ণা, শিপ্পি পাহাড় চূড়া, রামজাদী বৌদ্ধ মন্দির, লামার মিরিঞ্জা পর্যটন স্পট, নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন স্পট, কুমির খামার, সদরের শৈলপ্রপাত ঝর্ণা, আমতলী ঝর্ণা, ঝুরঝুড়ি ঝর্ণা বা রুপালী ঝর্ণা, বনপ্রপাতের মত দৃষ্টিনন্দন দর্শণীয় স্থানগুলো খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।

আগামীকাল ২১ আগস্ট শুক্রবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণপিপাসু পর্যটক এবং স্থানীয় দর্শনার্থীদের জন্য পর্যটন শিল্পের সবগুলো দুয়ার খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

বান্দরবান আবাসিক হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, পর্যটনের সঙ্গে এই অঞ্চলে সার্বিক অর্থনীতি জড়িত। শুধু আবাসিক হোটেল, মোটেল নয়, পর্যটক নির্ভর এই অঞ্চলের সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যও। দীর্ঘ পাঁচ মাস সবকিছু বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এই অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ। তবে পর্যটন স্পট এবং আবাসিক হোটেলগুলো ২১ আগস্ট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পর্যটনশিল্প নির্ভর পাহাড়ের অর্থনীতির চাকাটি ঘোরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে খুলে দেয়ার ঘোষণায় আবাসিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ধোয়ামোছার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্টরা। ফিরতে শুরু করেছে ছাটাই এবং অঘোষিত ছুটিতে থাকা শ্রমিক-কর্মচারীরাও।

ট্যুরিস্ট পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাছিরুল আলম বলেন, দীর্ঘ পাঁচ মাস পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ থাকায় ট্যুরিস্ট গাড়িগুলোর শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। খেয়ে না খেয়ে অলস সময় কাটাচ্ছে শ্রমিক পরিবারগুলো। তবে শুক্রবার থেকে সবগুলো পর্যটন স্পট পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরিবহন শ্রমিকেরা ট্যুরিস্টদের বিনোদন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণে সর্বাত্মক সেবা দিবেন।

রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল আলম ও বার্মিজ মার্কেটের ঐতিহ্যগত পোষাক-অলংকার ব্যবসায়ী দিপীকা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, মূলত এই অঞ্চলের সবগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য পর্যটক নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাটগুলো খুলে দেয়া হলেও পর্যটক না থাকায় কোনো বেচা-বিক্রি ছিল না। তবে শুক্রবার থেকে পর্যটন স্পট এবং আবাসিক হোটেল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পর্যটকদের আগমন ঘটবে বেচা-বিক্রিও শুরু হবে।

এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম বলেন, পর্যটন সংশ্লিষ্ট সভায় শুক্রবার ২১ আগস্ট থেকে সকল পর্যটন স্পট এবং আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট সবগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে ভ্রমণপিপাসু পর্যটক এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।