করোনার জিন বিন্যাস উন্মোচনের দাবী - সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া্র সঙ্গে মিলেছে চট্টগ্রামে আক্রান্তের ধরন

করোনার জিন বিন্যাস উন্মোচনের দাবী - সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া্র সঙ্গে মিলেছে চট্টগ্রামে আক্রান্তের ধরন

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

চট্টগ্রামে প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে । আর এই করোনা নিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের গবেষকরা অনেক এগিয়ে গেছে । করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন বিন্যাস উন্মোচনের দাবি করেছেন চট্টগ্রামের একদল গবেষক।

এজন্য তারা চট্টগ্রাম বিভাগে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সাত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেন।

এসব জিন বিন্যাসের সঙ্গে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের জিন বিন্যাসের মিল রয়েছে বলে বলা হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিজেআরআই) এবং ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অভ ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজের (বিআইটিআইডি) যৌথ গবেষণায় এ জিন বিন্যাস উন্মোচচিত হয়েছে। বিডিনিউজ

গবেষক দলের সদস্যরা হলেন সিভাসু’র প্যাথলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জুনায়েদ ছিদ্দিকী, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক ড. পরিতোষ কুমার বিশ্বাস, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. সিরাজুল ইসলাম, বিআইটিআইডির পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটের ড. মো. শহীদুল ইসলাম ও সাব্বির হোসেন।

সিভাসু’র প্যাথলজি অ্যান্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জুনায়েদ ছিদ্দিকী বলেন, “জিন বিন্যাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার, এর বিবর্তন ও বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা এবং নিরাময়ের উপায় আবিষ্কার সহজ হবে।”

তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বিভাগে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সাতজন রোগীর ভাইরাসের জিন বিন্যাস উন্মোচন করা হয়। এর মধ্যে তিনটি সৌদি আরব, দু’টি সিঙ্গাপুর, একটি অস্ট্রেলিয়া ও একটি রাশিয়ার ভাইরাসের সাথে মিল পাওয়া গেছে। এসব রোগীদের সাথে ওই দেশগুলোর কারও যোগাযোগের ইতিহাস রয়েছে কি না তা বের করার চেষ্টা চলছে।”

আরও ২০টি নমুনার জিন বিন্যাস বের করার জন্য পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের সাতটির জিন বিন্যাস থেকে বোঝা যায় ঢাকায় আক্রান্তদের ভাইরাসের সাথে এখানকার ভাইরাসের তেমন মিল নেই। সেখানে ইউরোপিয়ান দেশগুলো থেকে সংক্রমিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।”

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর গত ২৫ মার্চ বিআইটিআইডি এবং ২৫ এপ্রিল সিভাসু শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে সিভাসু’র উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশের সমন্বয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা দুই সপ্তাহ ধরে অত্যাধুনিক নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং (এনজিএস) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষণাগারে এই জিন বিন্যাস উদ্ধারে কাজ করেন।

সিভাসু’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিআইটিআইডি’র ল্যাবে পাওয়া নমুনা সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলার ১২টি নমুনা ঢাকার বিজেআরআই-এর জিনোম সিকোয়েন্সিং ল্যাবে পাঠানো হয়। এই পদ্ধতিতে ইলুমিনা নেক্সটসেক প্ল্যাটফর্মে প্রায় ২৩ গিগাবাইট জিনোম ডাটা সংগৃহীত হয়।

পরবর্তীতে বায়োইনফরমেটিক্স অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে মানবকোষের আরএনএ এবং করোনাভাইরাসের আরএনএ পৃথক করা হয়। এরপর সবগুলো সিকোয়েন্সকে জিনোম অ্যাসেম্বলি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণপূর্বক নভেল করোনাভাইরাসের জিন বিন্যাস উদঘাটন করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও এর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বিভিন্ন করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগী কোন ধরনের ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে, তা এই গবেষণার ফলে জানা সম্ভব হবে।