করোনাভাইরাসে কর্মহীনদের সহায়তা করা সেই ভিক্ষুক নাজিমকে পাকাঘর দিলেন প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসে কর্মহীনদের সহায়তা করা সেই ভিক্ষুক নাজিমকে পাকাঘর দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শেরপুর প্রতিনিধি ।। 

প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়ে মানুষের সহায়তায় ১০ হাজার টাকা দান করা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সেই ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করতে চান।

আজ রোববার ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে নতুন ঘর ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নির্মিত দোকানের চাবি বুঝিয়ে পাওয়ার পর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।

উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামে নাজিম উদ্দিনের হাতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার বাড়ি ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দোকানের চাবি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনার কলি মাহবুব। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইমের পক্ষ থেকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উপহার দেওয়া হয়। 

নাজিম উদ্দিনের হাতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার বাড়ি ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দোকানের চাবি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনার কলি মাহবুব। ছবি : সংগ্রহ

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়নাল আবেদীন, থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।

গত ২১ এপ্রিল কর্মহীনদের খাদ্য সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ত্রাণ তহবিলে গত দুই বছরে সঞ্চয়ের ১০ হাজার টাকা দান করেন ওই ভিক্ষুক। নিজের ভাঙা বসতঘর মেরামত করার জন্য ভিক্ষা করে ওই টাকা জমিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে পোস্টকার্ডবিডি.কম’সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরে তার এই দানের খবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এলে তিনি নাজিম উদ্দিনের উদারতায় খুশি হয়ে নিজের তহবিল থেকে উপহার হিসেবে জমি, ঘর ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি দোকান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

নাজিম উদ্দিন যে জমিতে ঘর উত্তোলন করে এতদিন ছিলেন সেটি ছিল মূলত সরকারের খাসজমি। এটি নাজিম উদ্দিনও এতদিন জানতেন না। সরকারের এই খাসজমিও নাজিম উদ্দিনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই জমি কিছুটা সম্প্রসারণ করে ১৫ শতাংশ জমি তার নামে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তাকে যেন আর কখনো ভিক্ষা করতে না হয় সেজন্য একটি দোকানও করে দিয়েছে জেলা প্রশাসক।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হতদরিদ্র নাজিম উদ্দিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। ইতোমধ্যে তার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসাও করা হয়েছে।

বাড়ি পেয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘মনে করেন আমি তো করোনার জন্য ট্যাহাডা দিছি। সেখানে খুশি হইয়া প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে উপহার দিছে, আমি খুব খুশি হইছি। ঘরবাড়ি সব দিল। আমি আর কোনো কিছু চাই না। আমি দোয়া করি আল্লাহ তারে (প্রধানমন্ত্রী) দীর্ঘদিন বাঁচায়ে রাখুক। যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন আল্লাহ তারে রাজত্ব (সরকার পরিচালনা) করার সুযোগ দিক।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনে থেকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব দয়ালদার মানুষ, তারে একটু দেখবার জন্য আমার মনটা কান্দে। ঘরবাড়ি পাইছি আমি। এহন তার (প্রধানমন্ত্রী) পা ছুঁয়ে সালাম করা আমার খুব ইচ্ছে। তারে দেখা পাইলে আমি তার পা ছুঁয়ে সালাম করব।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনার কলি মাহবুব বলেন, ‘আমরা সবাই আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের মহানুভব ব্যক্তি নাজিম উদ্দিনের হাতে একটি পাকা বাড়ির চাবি তার হাতে তুলে দিলাম।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনে থেকে দেখতে নাজিম উদ্দিনের ইচ্ছার বিষয়ে ডিসি বলেন, ‘এ বিষয়টা আমার জানা নেই। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান, তাহলে আমরা সেটা যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি।’