করোনাভাইরাস নিয়ে চীন যা স্বীকার করলো

করোনাভাইরাস নিয়ে চীন যা স্বীকার করলো
করোনাভাইরাস নিয়ে চীন যা স্বীকার করলো

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আর এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ২০ হাজার ৪ শত ৩৮ জনে। এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নিজেদের ভুল আর ঘাটতির কথা স্বীকার করে নিলো চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব।

দ্যা পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি বলেছে, জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের আরও উন্নতি করতে হবে। এর মধ্যে বন্যপ্রাণীর বাজারে বড় ধরণের অভিযান চালানোর আদেশ দেয়া হয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী সোমবার দিনই হুবেই প্রদেশে মারা গেছে ৬৪ জন।

এ প্রদেশ থেকেই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করেছে বলে মনে করা হয়। ওদিকে ২০০২-০৩ সাল সার্সে মৃত্যুর রেকর্ড ইতোমধ্যেই অতিক্রম হয়েছে। আবার চীনের বাইরে এপর্যন্ত অন্তত ১৫০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ফিলিপাইনে একজনের মৃত্যুও হয়েছে।

চীনের পলিটব্যুরো যা বলছে
চীনের সরকারি বার্তা সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
এখানে বলা হয়েছে, এ ঘটনা চীনের সরকারি সিস্টেমের জন্য একটি 'বিগ টেস্ট', যা থেকে শিক্ষা নেয়া জরুরি।

রিপোর্টে বলা হয়, "মহামারি মোকাবেলায় ভুলত্রুটি আর ঘাটতি চোখে পড়েছে। আমাদের জরুরি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নত করতে হবে এবং জরুরি বিপজ্জনক কাজগুলো মোকাবেলায় আরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে"। একই সাথে বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং এজন্য বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে। খবর বিবিসি বাংলা

মনে করা হয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। উহান তাই এখনো সরকারি পদক্ষেপে অগ্রাধিকার পাবে ও আরও মেডিকেল স্টাফ উহানে পাঠানো হবে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে মহামারি প্রতিরোধে কর্মকর্তাদের পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে এবং যারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে তাদের শাস্তির মুখে পড়তে হবে। এর মধ্যে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত এক কিশোরের মৃত্যুর পর দুজন কর্মকর্তাকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

ওই কিশোরের বাবাকে করোনাভাইরাস সন্দেহভাজন হিসেবে কোয়ারেন্টাইনে নেয়ার পর ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। বাবা ছাড়া তাকে দেখভালের আর কেউ ছিলোনা।

মাঠের পরিস্থিতি
সোমবার একদিনেই ৬৪ জনের মৃত্যু এখন পর্যন্ত এক দিনে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগের দিন ৫৭ জন মারা গিয়েছিলো।
উহানে দ্রুততার সাথে দুটি নতুন হাসপাতাল করা হয়েছ, যদিও সেগুলো এখনো পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করেনি। ওই প্রদেশের সব মানুষের জন্যই মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে উপকরণ সংকট আছে এবং সেজন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

একজন মুখপাত্র বলেছেন, "চীনের এ মূহুর্তে জরুরি ভাবে মেডিকেল মাস্ক, প্রটেকটিভ স্যুট ও নিরাপত্তা চশমা দরকার"। ওদিকে সাংহাইয়ের মতো কিছু শহরে নতুন বছরের ছুটি বাড়ানো হয়েছে, বন্ধ আছে স্কুলগুলোও। আবার হংকংয়ে পনের জন্য আক্রান্ত হওয়ার পর দেশটি চীনের সাথে ১৩টি সীমান্ত পথের দশটিই বন্ধ করে দিয়েছে।

অন্য দেশগুলোর ভূমিকা
জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর (যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য,ক্যানাডা, ফ্রান্স ও ইটালি)স্বাস্থ্য মন্ত্রীরা সোমবার বৈঠকে মিলিত হয়েছিলো। জার্মানি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন তারা ভ্রমণ বিধিনিষেধ, ভাইরাল গবেষণা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের সাথে সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয়েছে। অনেক দেশ চীনের আক্রান্ত এলাকা থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে।

নিজের নাগরিকদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র যদিও চীন একে অতিরিক্ত আখ্যায়িত করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভীতি ছড়ানোর অভিযোগ করেছে।

সাম্প্রতিক কিছু ভ্রমণ বিধিনিষেধ:
•যারা সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করেছেন এমন ব্যক্তিদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর

•চীনের মূল ভূখন্ড থেকে আসা ভ্রমণকারীদের ঢুকতে দিচ্ছে না নিউজিল্যান্ড ও ইসরায়েল

•হুবেই থেকে আসা বিদেশীদের প্রবেশ বন্ধ করেছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া

•চীনের সাথে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করেছে মিসর, ফিনল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্য ও ইটালি

•মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়া (আংশিক) চীনের সাথে সীমান্ত বন্ধ করেছে

•বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রুজ শিপ অপারেটর সোমবার ঘোষণা করেছে, চীনে গিয়েছেন এমন যাত্রী ও ক্রুরা জাহাজে উঠতে পারবেন না

কতটা প্রাণঘাতী এই ভাইরাস?
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, উহানে হয়তো আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ হাজারের মতো। ওদিকে ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের হিসেব বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে আক্রান্তের যে সংখ্যা বলছে কর্তৃপক্ষ, আসল সংখ্যা তার চেয়ে বহু বহুগুন বেশি হতে পারে। লানচেট মেডিকেল জার্নাল বলেছে যারা মারা গেছেন তারা শুরুর দিকেই আক্রান্ত হয়েছেন।

এতে বলা হয় প্রথম ৯৯ রোগীকে উহানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং এর মধ্যে ৪০ জনের হৃদযন্ত্র দুর্বল ও রক্ত পরিবাহী শিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। আবার ১২ জনের ডায়াবেটিস ছিলো। তবে চীনের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন করোনাভাইরাসের হালকা উপসর্গ থাকলে সুস্থ হওয়ার জন্য এক সপ্তাহও যথেষ্ট।

মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে চীন থেকে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান। ফিলিপাইনসহ অনেক দেশই এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন থেকে আগতদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক দেশের এয়ারলাইন্স চীনগামী ফ্লাইটও বন্ধ করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর সেটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ২০টি দেশে। চীনের বাইরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ফিলিপাইনে।