ক্যাসিনো মালিকানায় খালেদ, কাওসার, মুরাদ, সম্রাট ও সাঈদ

ক্যাসিনো  মালিকানায় খালেদ, কাওসার, মুরাদ, সম্রাট ও সাঈদ
ক্যাসিনো মালিকানায় খালেদ, কাওসার, মুরাদ, সম্রাট ও সাঈদ

বড় ধরনের জুয়ার আসর বসে এমন হাতে গোনা ১৭ থেকে ২০টি ক্যাসিনো রয়েছে রাজধানীতে। এ সকল ক্যাসিনোগুলো রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা মডেল টাউন, গুলশানের বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, ফকিরাপুল, ক্লাবপাড়া, বাংলামোটর, ইস্কাটন, ধানমন্ডি, গ্রিনরোড এলাকায় রয়েছে। এ সকল ক্যাসিনোর মালিকানা রয়েছে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও সেচ্ছাসেবক লীগের প্রভাবশালী নেতারা।

তারা হলেন- শাহে আলম মুরাদ, ইসমাঈল হোসেন সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভুইয়া, কাওসার মোল্লা ও কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদসহ আর কয়েকজন।

র‌্যাব সূত্র জানায়, রাজধানীর ব্যস্ততম ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্যাসিনোর মালিক হলেন ঢাকা দক্ষিণের যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুইয়া। গুলশানের বনানীতে তার আরো একটি ক্যাসিনো রয়েছে। তার নাম গোল্ডেন ঢাকা। গতকাল রাতে এ দুটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব দুই নারীসহ ১৪২ জনকে আটক করেছে। জব্দ করেছে টাকা,মাদক ও জাল নোট। পাশপাশি ২টি ক্যাসিনো সীল করে দিয়েছে আদালত। র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সরোয়ার আলম ১৪১ জনের ৩১ জনকে এক বছর বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন।

অপরদিকে মতিঝিল ফকিরাপুলের ওয়ান্ডার্স ক্লাবের ক্যাসিনোতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে প্রায় ২২ জনকে আটক এবং টাকা ও মাদক জব্দ করেছে। র‌্যাবের অভিযানের খবর পেযে ক্যাসিনোর মালিক সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোহাম্মদ কাওসার মোল্লা তার সহযোগিদের নিয়ে সটকে পড়েন। র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম ওয়ান্ডার্স ক্লাবের পেছনে ক্যাসিনোটি সীল করে দিয়েছেন। র‌্যাব জানায়, ওয়ান্ডারর্স ক্লাবের ক্যাসিনোর মালিক হলেন, সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাওসার মোল্লা এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ। দুজনই পালিয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

এরপরই র‌্যাব অভিযান চালায় গুলিস্থানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে। মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ৪০ জনকে। এসময় কয়েকটি পাসপোর্টও উদ্ধার করা হয়। নগদ পাওয়া যায় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬১৫ টাকা।

অভিযানে অংশ নেয়া র‌্যাব কর্মকর্তারা তাদের সোর্সের বরাত দিয়ে বলেন, গুলিস্থানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের ক্যাসিনোর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও যুবলীগ নেতা সম্রাটের অংশিদারিত্ব রয়েছে। এছাড়া ওই ক্যাসিনোর কক্ষের ভিতরে রয়েছে বড় বড় মহারথিদের ছবিও। এ সকল মহারথিদের ছবি টানিয়ে এবং তাদের দোহাই দিয়েই চলতো কোটি টাকার জুয়া ও মদের আসর।

জানা যায়, ফকিরাপুল ইয়াংস মেন্স ক্লাব থেকে আটক করা হয় ১৪২ জনকে। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে ১ বছরের কারাদণ্ড ও বাকিদের ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। তাদেরকে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর কথা বলেছেন র‌্যাব সদস্যরা। ইয়াংস মেন্স ক্লাব থেকে উদ্ধার করা হয় ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ওয়ান্ডারাস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে নগদ ১০ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়াও ২০ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট পাওয়া গেছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম। অভিযানে জুয়ার ডিজিটাল ও অ্যানালগ সরঞ্জাম পাওয়া যায়। সবগুলো ক্যসিনো চালিত ক্লাবগুলো সীলগানা করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, এই মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আলী আহম্মেদ। র‌্যাবের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক জানানো হয়, রাজধানীতে যুবলীগের মদদে ৬০টি ক্যাসিনো চলছে বলে খবর প্রকাশ হওয়ার প্রেক্ষিতেই এই সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়।

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সরওয়ার আলম বলেন, ক্যাসিনোর মালিকানা যাদেরই হোক তাদের ছাড় দেয়া হবে না। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত অপকর্ম করে যাচ্ছে।