কেএসআরএমের মৃত শ্রমিকের লাশ লুকিয়ে রাখার অভিযোগ

কেএসআরএমের মৃত শ্রমিকের লাশ লুকিয়ে রাখার অভিযোগ
লাশ নিয়ে কেএসআরএমের লুকোচুরি

বিশেষ প্রতিবেদক ।। 

শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কাজ আইন অনুযায়ী ছুটির দিনে বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু তা অমান্য করে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ চলছিল কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন খাজা শিপ ইয়ার্ডে। এতে দুর্ঘটনায় মো. ইব্রাহিম নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার বিকালের দুর্ঘটনায় শ্রমিকের লাশ লুকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে ইয়ার্ড মালিকের বিরুদ্ধে। শ্রমিক ও প্রশাসনের চাপের মুখে রাত ১০টার দিকে নিহতের ঘটনা স্বীকার করলেও পোস্ট মর্টেম ছাড়াই দাফন করা হয় ইব্রাহিমকে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, বন্ধের দিনে কাজ করানোর কারণে লাশ দিতে চায়নি ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। চাপের মুখে লাশ দিলেও দুর্ঘটনার খবর এবং কারণ আড়াল করতে পোস্ট মর্টেম করতে দেওয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শ্রমিক নেতারা।  জানা গেছে, নিহত শ্রমিক ইব্রাহিম নওগাঁ জেলার রাণীরহাট থানার বাসিন্দা।

চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের গহিরাতলা এলাকায় খাজা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ফিটার মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছিলেন। শুক্রবার জাহাজে কোনো শ্রমিক কাজ করার কথা নয়। শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করে ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ কাজ করাচ্ছিল। কিন্তু কোনো ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। দুর্ঘটনার পর শ্রমিকের লাশ লুকিয়ে রাখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাশ হস্তান্তর করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছরের ২৪ মার্চ একই ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় নিরঞ্জন দাশ ও সুমন দাশ নামে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন একজন কর্মকর্তা। তখনো শ্রমিকদের মত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ  কবির স্টিল রি-রোলিং মিলসের (কেএসআরএম) মালিকানাধীন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে জাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের লাশ গুম, তথ্য গোপন, শিশু শ্রমিকের মাধ্যমে কাজ করানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জাহাজ কাটার সময় লোহার পাত এবং শেকল পড়ে, বয়লার বিস্ফোরণে মৃত্যু হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বলে চালিয়ে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

নিরাপত্তা সরঞ্জাম না দেওয়া এবং এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে প্রতি বছর একাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর পাশাপাশি হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হয়েছেন অনেকে। হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং চিকিৎসার বিষয়েও উদাসীন মালিকপক্ষ। শ্রমিক নেতারা বলছেন, ক্ষতিপূরণই সমাধান নয়। কাজের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

শিপ ব্রেকিং ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্তের অভিযোগ দুর্ঘটনার পর নিহত শ্রমিকের লাশ দিতে চায়নি ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার কাজ করানোর কারণে আইনের ফাঁকে আটকা পড়ার ভয়ে তারা লাশ দিতে চায়নি। পরে শ্রমিকদের চাপের মুখে লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। ফলে পোস্ট মর্টেম করতে পারেনি পরিবার। শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সফর আলী ও এএম নাজিম উদ্দিন। 

এদিকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও মৃত্যু হার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় খাজা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রাণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাফর উল্লাহ্। কাটিং পর্যায়ে দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খাজা শিপ ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় সতর্কতা অবলম্বনের কথা বারবার বলা হচ্ছে। এর পরও এ ব্যাপারে তারা উদাসীন। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে এবার ইয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিদিন পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। 

ইয়ার্ডে মৃত শ্রমিকদের পোস্ট মর্টেম বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে মনে করেন জাহাজ ভাঙা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা উন্নয়ন সংস্থা ইপসার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলী শাহীন। তিনি বলেন, কেবল ক্ষতিপূরণই সমাধান নয়। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যুর পর তার পোস্ট মর্টেম এবং দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

দুর্ঘটনার পর গতকাল শনিবার ইয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের শ্রম পরিদর্শক (স্বাস্থ্য) শুভঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে গতকাল ইয়ার্ড পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছি।