এগিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে বেড়ার কাজ

এগিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে বেড়ার কাজ
এগিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে বেড়ার কাজ

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে চলছে কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণের জন্য পিলার বসানোর কাজ। যা তত্ত্বাবধান করছে সেনা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। শ্রমিকরা গর্ত তৈরি করছে এবং তাতে পিলার বসানোর কাজ করছে সেনা বাহিনীর সদস্যরা।

চলতি মাসের প্রথম থেকে এই কাজ শুরু হয়ে গত এক সপ্তাহের প্রায় দুই কিলোমিটার মত পিলার দৃশ্যমান হয়েছে। আর সেনা বাহিনী কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণের জন্য পিলার বসানোর যে কাজ করছে তা দেখছেন রোহিঙ্গারা। তবে রোহিঙ্গারা এই নিয়ে কোন সমস্যা দেখছেন না। বরং তারা ক্যাম্পে কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণকে নিরাপদ বলে মনে করছেন।

উখিয়ার বালুখালীস্থ ক্যাম্প-১২ এর জি-১৬ ব্লকের রোহিঙ্গা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘যে ঘেরাটা দেয়া হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য ভাল হচ্ছে। কারণ ক্যাম্পে কোন সন্ত্রাসী আসতেও পারবে না, আবার যেতেও পারবে না। আর কোন অপরাধমূলক কাজও করতে পারবে না। এটা একটা খুব ভাল কাজ হয়েছে। এখন আমাদের খুব খুশি লাগছে।’

বালুখালী ক্যাম্পে জি-১ ব্লকের রোহিঙ্গা কবির আহমদ বলেন, ‘ক্যাম্প ঘিরে যে কাটাতাঁরের বেড়া দেওয়া হচ্ছে তার জন্য আমরা নারাজ নই। বরং এই কাটাতাঁরের বেড়া আমাদেরকে নিরাপদ করবে, নিরাপত্তা দিবে। এর জন্য আমাদের কোন অসুবিধা হবে না। আর এই কাটাতাঁরের বেড়ার মধ্যে থেকেই আমরা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই।‘

বালুখালীস্থ ক্যাম্প-১২ এর জি-১ ব্লকের রোহিঙ্গা হাফেজ মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ কোন আমাদের দেশ নয়; আমরা হচ্ছি এখানকার মেহমান। মেহমান, মেহমান হিসেবে থাকবো এটাই জানি। বাংলাদেশ সরকার যা করছে সেগুলোর সাথে আমরা একমত। এটাতে কোন ভেদাভেদ নেই। আমরা এদেশের বাসিন্দা কিংবা স্থানীয় জনগণ নয়; আমরা তো রোহিঙ্গা; আমরা রোহিঙ্গা হিসেবে এখানে থাকতে চাই।’

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ছোট বড় পাহাড়ের ১০ হাজার একর জায়গায় বসবাস করছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। যাদের মধ্যে অনেকেই নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। খুন থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করছে না। যে কারণে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাটাতাঁরের বেড়া নিমার্ণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

যার প্রেক্ষিতে ক্যাম্পে কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে পিলার বসানোর কাজ।

এদিকে দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় দারুণ খুশি কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা। এই কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।

উখিয়ার বালুখালী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ আহমদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণ করার জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এটা পূরণ হচ্ছে। আর দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনা বাহিনী এটা করছে। এই জন্য আমরা স্থানীয়রা সেনা বাহিনী ও সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

উখিয়ার থাইংখালীর স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই খুন, অপহরণ, ধর্ষণ ও ডাকাতি করছে। অনেক খারাপ লোকও রয়েছে। এই জন্য ক্যাম্পে কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণের কাজ সেনা বাহিনী শুরু করেছে এটা আমরা স্থানীয়রা খুব ভাল মনে করছি। কাটাতাঁরের বেড়ার কাজ শুরু হওয়ায় আমরা বেশ খুশি। কারণ এটার ফলে আমরা নিরাপদ হব।’

এদিকে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোকে কাঁটাতারের আওতায় এনে দ্রুত প্রত্যাবাসনে কাজ শুরু করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

এব্যাপারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহামুদুল হক চৌধুরী বলেন, অবশ্যই উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণ জরুরী। কাটাতাঁরের বেড়া না থাকার ফলে গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে অনেক অনেক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছিল। কাটাতাঁরের বেড়া হয়ে গেলে রোহিঙ্গাদের এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া অনেকাংশে কমে যাবে।

মাহামুদুল হক চৌধুরী আরও বলেন, দেরিতে হলেও বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পে কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তার জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি কাটাতাঁরের বেড়ার মধ্যে রেখেই রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে ব্যবস্থা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত না যায় ততদিন পর্যন্ত কাটাতাঁরের বেড়ার মধ্যে তাদের রাখতে হবে। তা না হলে আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত আসতে পারে। এই কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণের মাধ্যমে তাদের রাখা গেলে অনেক অনেক অপরাধ কর্মকান্ড রোধ করা যাবে এবং ক্যাম্পে সু-শৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করবে।

আর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক ধরণের ঝুঁকি রয়েছে। যার মধ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও জঙ্গিবাদের ঝুঁকি উড়িয়ে দেয়া যায় না। সব মিলিয়ে এসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠী যাতে দেশের ভেতর ঢুকে কোন ধরণের ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য কাটাতাঁরের বেড়ার বড় একটা ভূমিকা রাখবে।

পুলিশ সুপার আরও জানান, ‘রোহিঙ্গারা ভুঁয়া পাসপোর্ট ও ভুয়া এনআইডি করার জন্য ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গা যায় এবং চেষ্টা করে। কিন্তু এখন কাটাতাঁরের বেড়ার দেয়ার ফলে তাদের সেই প্রবনতা অনেকাংশে কমে আসবে।’

উল্লেখ্য, গেল দু’বছরের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪ টি ক্যাম্পে খুন হয়েছে চল্লিশের মতো। আর হত্যা, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতির মামলা হয়েছে প্রায় চার শতাধিক। যেখানে আসামী করা হয়েছে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে।