উত্তর এল অনলাইন ক্যালকুলেটরে আর প্রশ্ন গেল মোবাইলে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থী আটক

চবি প্রতিনিধি ।।

উত্তর এল অনলাইন ক্যালকুলেটরে আর প্রশ্ন গেল মোবাইলে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থী আটক

স্নাতক প্রথম শ্রেণিতে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে এক পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রশাসন। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ৫৩২ নম্বর রুম থেকে তাকে আটক করা হয়।

আটক পরীক্ষার্থীর নাম জোবায়ের আহমেদ সিয়াম। তার বাড়ি পাবনা জেলায়। সে পাবনার বুলবুল কলেজের শিক্ষার্থী। তার সাথে এ জালিয়াত চক্রে রয়েছে আরও দুইজন। তারা হল পিয়াম ও মেহেরান। পিয়াম সম্পর্কে সিয়ামের খালাতো ভাই।

আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম স্বীকার করেছে গত (২৬ অক্টোবর) শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বি-১ ইউনিটে একই পথ অবলস্বন করে পিয়াম (সিয়ামের খালাত ভাই) সফলভাবে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। সেখানে একই প্রক্রিয়ায় তারা ৪০টি প্রশ্নের উত্তর করে। তাদের সাথে জড়িয়ে আছে মেহেরান নামের আরও একজন।

পুরো প্রক্রিয়াটি কিভাবে সংঘটিত হয়েছে তা সিয়ামের মোবাইল থেকে বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি।

জানা যায়, চট্টগ্রামে চাকরিরত তার বড় ভাইকে নিয়ে ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে আসে সিয়াম। সে পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে নিজের মুঠোফোন ভাইয়ের কাছে দিয়ে ভাইয়ের দামী স্মার্টফোনটি নিয়ে পরীক্ষার হলে যায়। এরপর মোবাইলের সঙ্গে ক্যাসিও কোম্পানির এফএক্স-৮২ এমএস মডেলের ক্যালকুলেটরের অনলাইন সংযোগ ঘটায়। মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে টেলিগ্রামের মাধ্যমে ঢাকায় অবস্থানরত ফুয়াজ খান পিয়াম ও মেহেরানের কাছে পাঠিয়ে দেয়। তারা সেখান থেকে সিয়ামের কাছে উত্তর পাঠালে সেটি ক্যালকুলেটরে পেয়ে যায় সিয়াম। কিন্তু পরে ক্যালকুলেটরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আবার মোবাইলে টেলিগ্রামের মাধ্যমে এই জালিয়াতি চালিয়ে যায় সে।

তার টেলিগ্রামে বিকেল ৩টা ৩১মিনিট থেকে ৪টা ১ মিনিট পর্যন্ত ৮ বার ফিয়ামের সঙ্গে কথোপকথনের তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এফএক্স-১০০ মডেলের নিচে সব ধরনের ক্যালকুলেটর ব্যবহারে অনুমোদন রয়েছে। এই মডেলের ক্যালকুলেটরে জালিয়াতি সম্ভব নয় বলে সকলের ধারণা। কিন্তু এফএক্স-৮২ মডেলের ক্যালকুলেটরে কিভাবে জালিয়াতি করা সম্ভব জানতে চাইলে সিয়াম জানায়, এটি চায়না থেকে আমদানিকৃত ক্যালকুলেটর। দেশে পাওয়া যায় না। এর মূল্য ১৬ হাজার টাকা।

পরীক্ষা চলাকালে নির্ভয়ে জালিয়াতি করে যাচ্ছিল সিয়াম। হাঁটুর ভাঁজে মোবাইল রেখে একের পর এক উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল সে। এ জালিয়াতিতে বাধ সাজে তার পেছনের সিটে থাকা এক মেয়ে পরীক্ষার্থী। সিয়ামকে জালিয়াতি করতে দেখেছে বলেও জানায় তার বেঞ্চের পেছনে থাকা এক মেয়ে।

কিছুক্ষণ পরেই ওই মেয়ে হল পরিদর্শকদের জানিয়ে দেন সিয়াম জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। পরে পরিদর্শকরা সত্যতা পেয়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে ব্যাপারটি অবহিত করেন।

জালিয়াতির দায়ে আটক জোবায়ের আহামমেদ সিয়াম বলেন, আমরা অনলাইন থেকে এসব বিষয়ে জানতে পারি। আমার সাথে পিয়াম আর মেহেরান ছাড়া আর কেউ জড়িত নেই। এরকম ধরা পড়লে পরীক্ষা বাতিল ছাড়া আর কিছু হয় না বলে আমি জানি। তাই এসবে গিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র বলেন, ‘আমরা ভর্তি জালিয়াতির খবর পেয়ে তাকে আটক করি। জালিয়াতির সব আলামত জব্দ করি। পরে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখন তাকে হাটহাজারীর থানায় হস্তান্তর করা হবে।’