ইসলাম ধর্মে সুদকে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সুদের বিরুদ্ধে নবীজির কঠোরতা

ইসলাম ধর্মে সুদকে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সুদের বিরুদ্ধে নবীজির কঠোরতা

মুফতী এনামুল হাসান।।

সুদকে আরবিতে রিবা বলা হয়। এর অর্থ অতিরিক্ত, সম্প্রসারণ ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় সুদ বলা হয় মানুষের মূল সম্পদের সমজাতীয় সম্পদ সময়ের পরিবর্তনে অতিরিক্ত গ্রহণ বা প্রদান করা। অন্যভাবে বললে, প্রদেয় অর্থ ঋণ হিসেবে দিয়ে পরবর্তীকালে ফেরত গ্রহণের সময় মূলের অতিরিক্ত নেওয়াকেই সুদ বলা হয়।

ইসলাম ধর্মে যেসব বিষয় অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে সুদ অন্যতম।

আল্লাহ তায়ালা সুদ নিষিদ্ধ করে বলেছেন, ‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭৫)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার গোশত সুদের বর্ধিত হলো তার জন্য জাহান্নামই হলো যথাযথ বাসস্থল। হযরত জাবের (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে শরীরের রক্ত-মাংস হারাম থেকে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যে রক্ত-মাংস হারাম মাল দ্বারা গঠিত তার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত স্থান।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৩৯১৯)

সুদ প্রসঙ্গে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। আল্লাহ তায়ালা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যে অংশ বাকি আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হও। যদি তোমরা তা না করো তা হলে আল্লাহ ও তার রাসুলের পক্ষ হতে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে রাখো।’ (সুরা বাকারা : ২৭৮-৭৯)। সুদের লেনদেন ও সুদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি কঠোর ও সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যারা সুদ খায়, সুদ দেয়, সুদের হিসাব লেখে এবং সুদের সাক্ষ্য দেয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের সবার ওপর লানত করেছেন। অপরাধের ক্ষেত্রে এরা সবাই সমান।’ (মেশকাত : ২৮০৭)।

সুদ অত্যন্ত জঘন্যতম পাপ। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পাপের সত্তরটি স্তর রয়েছে। যার নিম্নতম স্তর হলো সুদের; আর তা মায়ের সঙ্গে যিনা করার সমতুল্য।’ (ইবনে মাজা : ২২৭৪)। সুদের বিষয়ে কমবেশির কোনো তারতম্য নেই। সুদের সঙ্গে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র সংশ্লিষ্টতা থাকাও মহাপাপ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হানজালা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন ‘কোনো ব্যক্তি যদি এক দিরহাম রৌপ্যমুদ্রা সুদ হিসেবে জ্ঞাতসারে গ্রহণ করে, তাতে তার পাপ ছত্রিশ বার ব্যভিচার করার চেয়েও অধিক হয়।’ (মেশকাত : ২৮২৫)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সুদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন, তার শেষ পরিণতি হলো চরম নিঃস্বতা ও দারিদ্র্য।’ (মেশকাত : ২৮২৭)। এসব বর্ণনায় স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, সুদ ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম। দুনিয়াতে এর শেষ পরিণতি নিঃস্বতা আর পরকালে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। তাই কম হোক, বেশি হোক সুদের সঙ্গে সব রকম সম্পৃক্ততা বর্জন করা একান্ত জরুরি।

সুদ সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করে। গরিবকে আরও গরিব করে দেয়। অর্থনৈতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে। তাই আসুন, সুদের মতো জঘন্যতম পাপ পরিহার করে আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করে অভাব ও আজাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হই।