আনোয়ারার বিভিন্ন ভূমি অফিসে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য 

আনোয়ারার বিভিন্ন ভূমি অফিসে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য 

আনোয়ারা প্রতিনিধি ।।

দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন ভূমি অফিসে । খতিয়ান, খাজনা পরিশোধ, মিসকেস, খাস পুকুর ইজারা, হিয়ারিং ইত্যাদি দালালরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে জানা গেছে। দালাল না ধরে সরাসরি অফিসে গেলে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি।

উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বদলি হয়ে অন্যত্র গেলেও দালালরা রয়ে যায় বহাল তবিয়তে। কোনো কোনো কর্মকর্তা দালালদের বিষয়ে প্রথম-প্রথম লম্ফঝম্ফ করলেও কিছুদিনের মধ্যেই অদৃশ্য কারণে সব থেমে যায়। এ কারণে কাজ উদ্ধারের স্বার্থে সাধারণ মানুষ দালালদের হাত ধরে ভূমি অফিসে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এরই মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিসহ ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলোতে ধীরে-ধীরে ডালপালা বেড়েছে দালালদের। উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে দালালদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। আর হয়রানী থেকে রক্ষা পেতে ভূক্তভোগীরা দালাল ধরে সহজে কাজ করে নেন বলেও জানা গেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলা ভূমি অফিসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। সাধারণ মানুষ ভূমি গুলোতে সেবা নিতে গিয়ে অফিসার ও দালালদের আলাদা করতে না পেরে প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন। অন্যদিকে ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কাছে সেবাপ্রত্যাশী মানুষ সহযোগিতা চাইলে তারা দালালদের কাছে পাঠিয়ে দেন বলেও জানা যায়। দালালদের সঙ্গে চুক্তি না করে ভূমি অফিসের সেবা পাওয়া দুষ্কর। ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা দালালদের ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারী করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূক্তভোগীরা জানান।

সূত্রে আরও জানা যায়, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে একই ষ্টেশনে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন একই এলাকায় অবস্থানের কারণে স্থানীয় দালালদের সঙ্গে তাদের একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভূমি কর্মকর্তারা দালালদের ব্যবহার করছেন অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন দালালরা লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে টাকার পাহাড় গড়ছেন ভূমি অফিসের কর্তারা। ভূমি অফিসের কর্তাদের আস্কারা পেয়ে দালালরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে এবং কোনো প্রকার নিয়মনীতি তোয়াক্কা করছে না। জমি খারিজের জন্য ১ হাজার ১৭০ টাকা গ্রহণের নিয়ম থাকলেও এ কাজের জন্য ১৫-২০ হাজার টাকা গ্রহণ করা হয় বলে ভূক্তভোগীরা জানান। এছাড়া খাজনা পরিশোধ, মিসকেস, খাস পুকুর ইজারা, হিয়ারিং ইত্যাদি বিষয়ে দালালরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, বরুমছড়া ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী না হয়েও গত ৮ বছর ধরে ইদ্রিস নামে এক ব্যক্তি সেবা নিতে আসা মানুষদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে টাকার বিনিময়ে সব ধরণের কাজ করে দেওয়ার নজিরও রয়েছে এখানে। উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়ে সবারই জানা তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ভূমি অফিসে দালালি করে অনেকে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।

বরুমছড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসার আবদুল্লাহ আল হারুন জানান, ইদ্রিস কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী না। সে মাঝেমধ্যে এখানে আসে, আমি নিজেও তাকে এখানে না আসার জন্য অনেকবার নিষেধ করেছি। বিগত ১ সপ্তাহ ধরে তাকে আমি আর দেখি নাই এখানে আসতে। তবে একটু পর ফোনে আবার বলেন, ইদ্রিছ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অস্থায়ী লোক।

আনোয়ারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীন আহমেদ চৌধুরী জানান, বিভিন্ন ভূমি অফিসে কাজের সুবিধার্থে কিছু অস্থায়ী লোক নিয়োগ করা হয়। তবে তারা যদি সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূমি অফিসের কোনো ধরণের দালালদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।