আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
আজ স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী 

বিশেষ প্রতিবেদক।।

আজ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী । ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দলটি আত্মপ্রকাশ করে। কেন্দ্রীয়ভাবে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ করা হলেও পরবর্তী সময়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নাম ‘আওয়ামী লীগ’ করা হয়। আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে প্রথম জাতীয় সম্মেলনে প্রতিনিধি ছিলেন প্রায় ৩শ’জন। এতে উদ্বোধনী ভাষণ দেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। পরে প্রতিনিধিদের সমর্থনে ৪০ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক, কারাগার থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৫৩ সালের ৩ থেকে ৫ জুলাই মুকুল সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনেও সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা ভাসানী। আর দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটি পান শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৫৫ সালের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর রূপমহল সিনেমা হলে তৃতীয় সম্মেলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় দলের। দলের নাম থেকে একটি ধর্মের নাম বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। ওই সম্মেলনে পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান।

আর পূর্ব পাকিস্তান শব্দ দুটি বাদ পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭০ সাল থেকে এ দলের নির্বাচনি প্রতীক ছিল নৌকা। পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের বৃহৎ সংগঠনে পরিণত হয়।

পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা হয়। দীর্ঘ নির্বাসন জীবন পার করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে এ দলের সভাপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ২১ বছর লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২৩ জুন দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে। ২০০১ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আরেক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারও রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে প্রাচীন এ দলটি। সবচেয়ে বেশি সময়- ৪০ বছর ধরে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এ সময়ের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। তার শাসনামলেই চলতি বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। অভূত অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শেখ হাসিনার হাত দিয়েই বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে এবং উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর দলটির পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন। একই দিন সকাল ৯টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আলোচনা সভার হবে। এতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।