আওয়ামী লীগ উত্তর জেলা'র সভাপতি-সম্পাদক এর দায়িত্ব নিতে চান ৬ নেতা

সম্মেলন ঘিরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস

আওয়ামী লীগ উত্তর জেলা'র সভাপতি-সম্পাদক এর দায়িত্ব নিতে চান ৬ নেতা
আওয়ামী লীগ উত্তর জেলা'র সভাপতি-সম্পাদক দায়িত্ব নিতে চান ৬ নেতা

রাহুল দাশ নয়ন ।।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনেও সভাপতি হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনীত হলেও এখনও উত্তর জেলায় একছত্র আধিপত্য আছে বর্ষীয়ান এ নেতার।
নেতাকর্মীদের মতে, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের আস্থাভাজনরাই উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে আসবেন। এখন পর্যন্ত ছয়জন নেতা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে লবিং-তদবির চালাচ্ছেন। এরমধ্যে সভাপতি কে হচ্ছেন, তা নিয়ে উত্তর জেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জোর আলোচনা চলছে।
নেতাকর্মীরা জানান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক এমএ সালামের মধ্যে যে কেউ সভাপতি হতে পারেন। তবে প্রার্থিতার বিষয়ে দুই নেতার কেউ সরাসরি মুখ না খুলেও কর্মী-সমর্থকরা প্রচার চালাচ্ছেন।
গত ২৭ জানুয়ারি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুর পর এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও এমএ সালাম সুন্দরভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এ দুই নেতা ছয়টি উপজেলায় সম্মেলন করে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গতি এনেছেন। সমঝোতার কমিটি হলে এ দুই নেতার মধ্যে নেতৃত্ব ভাগাভাগি হতে পারে।
সম্মেলনের বিষয়ে জানতে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী মুঠোফোন কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম বলেন, ‘উপজেলার সম্মেলন শেষে জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। ইতোমধ্যে প্রকাশনা, সাজসজ্জা, হল বুকিং শেষ হয়েছে। আরো যে ক’দিন সময় আছে, সেখানেই যাবতীয় কর্মকান্ড শেষ করবো।’
নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিইনি। জেলা পর্যায়ের সম্মেলন হিসেবে সভানেত্রীর নির্দেশনাতো থাকবেই। আবার কাউন্সিলরদের মতামতও প্রাধান্য পাবে।’
সভাপতি পদে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও এমএ সালামকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চান মিরসরাই আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমান, মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক ইউনুছ গনি চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।
মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমান বলেন, ‘আমি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। যে কারণে উত্তরের সবকটি উপজেলায় আমার পজেটিভ ভাবমূর্তি আছে। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়ে ভালোই সাড়া পাচ্ছি। সম্মেলন নিময় ও বিধি মোতাবেক হবে। কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। একাধিক প্রার্থী থাকলে অবশ্যই ভোটাভুটিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।
মিরসরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এখনও তো আমি কর্মী। আমি কর্মী হিসেবেই রাজনীতি করি। ৭০ সালের পর কর্মী হয়েছি। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছিলাম। জেল খেটেছি। সমস্ত অত্যাচার নির্যাতনেও দমে যাইনি। ২০০১ সালে সহকর্মীদের লাশ কাঁধে নিয়েছি। অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবেলায় মিরসরাইয়ে আমার ভূমিকা সম্পর্কে সবাই জানে। এতকিছুর পরেও আমি কাউন্সিলরদের কাছে প্রত্যাশা করতেই পারি। আশা করি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সমর্থকরা যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নিবেন।’
সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করে পরাজিত করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করেছি। বিগত জেলা কমিটিতেও মূল্যায়ন করা হয়নি। সিনিয়রদের উপরে জুনিয়রদের বসিয়ে দেয়া হয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেয়ার জন্য বলে আমাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরেও এমপি-মন্ত্রী না হয়ে এলাকার তিন হাজার কোটি টাকার কাজ করেছি। রাস্তা-ব্রিজ, স্থলবন্দর করার উদ্যোগ নিয়েছি। এখন দল যদি আমাকে পদে বসিয়ে মূল্যায়ন করে কাজ করতে আরো বেশি সুবিধা হবে। সম্মেলনে ভোটাভুটি করে নেতৃত্ব নির্বাচন করুক সে প্রত্যাশা করছি। ভোটাভুটি হলে পকেট কমিটি হবে না।’
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইউনুছ গণি চৌধুরী বলেন, ‘ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন, জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক দায়িত্ব পালন করছি। চট্টগ্রাম কলেজে শিবিরের বিরুদ্ধে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করেছি। জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও ফেরত দিয়েছি। এখনো যদি আমাকে যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হয় তাহলে কষ্ট লাগে। সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব আসুক সেটাই কামনা করি।