অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে দেশে : প্রধানমন্ত্রী

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে দেশে : প্রধানমন্ত্রী
অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে দেশে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন, দেশে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে । ভোলার বোরহানউদ্দিনে গতকাল রোববারের দুপুরের সংঘাতময় ঘটনাটি দেখিয়ে রাতে ঢাকায় গণভবনে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বক্তব্যে এই সতর্কবার্তা দেন তিনি। বোরহানউদ্দিনে এক হিন্দু তরুণের ফেসবুক আইডি ‘হ্যাক করে ‘অবমাননাকর’ বক্তব্য ছড়ানোর পর ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে সমাবেশ থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে নিহত হন চারজন, পুলিশসহ শতাধিক আহত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো যে আইডিটা হ্যাক হল আর তারপরে এই ধরনের ঘটনা ঘটাল, আর সেটাকে কেন্দ্র করে যারা.. কী উদ্দেশ্য নিয়ে সমবেত হল, আর পুলিশের উপর আক্রমণ করল। তাদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল, সেটাই বড় কথা। এর পরবর্তীতে দেখা যায়, ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার সব জায়গায় ছড়ানো হচ্ছে, অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। খবর বিডিনিউজের।
দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সকলেই জানেন, দেশটা একটু ভালোভাবে চলছে, অগ্রগতি হচ্ছে। তখনই একটা শ্রেণি আছে, নানাভাবে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। কাজেই এটা যেন তারা না করতে পারে, আমি এজন্য সাধারণ মানুষের কাছে সহযোগিতা চাই।
বোরহানউদ্দিনের ওই হিন্দু যুবকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার অভিযোগে দুই মুসলমান যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মুসলমান হয়ে মহানবী (সা.) কে নিয়ে যারা অবমাননাকর মন্তব্য করেন, তাদের কাজকে ‘জঘন্য’ আখ্যায়িত করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটা মুসলমান হয়ে কিভাবে নবী করিম (সা.) সম্পর্কে বাজে কথা লিখে আরেকজনকে জড়াবার চেষ্টা করতে পারে। কেউ যদি আমাদের নবী করিম (সা.) সম্পর্কে সত্যিই কিছু লিখে থাকে, নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যের ক্ষতি করার জন্য, অন্যকে ফাঁসানোর জন্য যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটাবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
অপরাধ দমনে প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন টেকনোলজি যেমন আমরা ব্যবহার করতে পারি, আবার সেই টেকনোলজিও আছে, যে কেউ অপরাধ করলে সেটাও ধরা পড়তে পারে। কাজেই সেটাও ধরা পড়বে। সে যদি ফেসবুকে টাকাটা না চাইত, তাহলে হয়ত তাকে খুঁজে বের করা মুশকিল হত। সে অপরাধ করে আবার টাকা চাইছে! এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব। ইতোমধ্যে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। আর যারা আছে, আমরা তাদের গ্রেপ্তার করবো। আমরা ফেসবুক অথরিটির সাথে যোগাযোগ করেছি। দুই-একদিনের মধ্যে আরও অপরাধীদের ধরতে পারব।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ভোলা পুলিশ জানায়, ওই হিন্দু যুবকের ফেসবুক আইডি হ্যাকের পর তা ফেরতের বিনিময়ে অর্থ চেয়েছিলেন মুসলমান এক যুবক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে আইডিটা হ্যাক করেছে.. হ্যাক করে আবার তাকে ফোন করে ২০ হাজার টাকা চেয়েছে। এই কথাটা শোনার পর পরই ওই হিন্দু ছেলেটা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে একটা জিডি করেছে। জিডি করা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে সেখানে রেখে দিয়েছে। যে টেলিফোনটা করেছিল তাকেও পাওয়া গেছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। একজন পীর সাহেব আছেন যিনি বেশ কিছু লোককে জড়ো করেন .. যখন পুলিশ তাদের বোঝাচ্ছে আপনারা এগুলো করিয়েন না, আমরা তো গ্রেপ্তার করেছি। তখন পুলিশের উপরও তারা চড়াও হয়। পুলিশ নিজেদের বাঁচাতে একটা ঘরে আশ্রয় নেয়। সে ঘরের দরজা ভাঙে এবং এমনকি একজন এসআইয়ের পায়ে গুলিও লাগে। প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমের কাছে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করার পাশাপাশি অপরাধীদের তথ্য প্রকাশেরও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, মিডিয়াকেও আমি বলব, সব সময় সব জিনিস এমনভাবে প্রচার করবেন না যে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যারা সত্যিকার অপরাধী, তাদেরকে দেখান। দেশবাসীকেও গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এইটুকুই বলব, ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। মানুষ সুফল যেমন ভোগ করছে, তেমনি মাঝে মাঝে এর কুফলও সমাজকে নানা রকম বিপদে ফেলে দেয়। বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য না। যার যার ধর্ম তার তার কাছে। সব ধর্মের মানুষ এদেশে বাস করবে। সেভাবেই আমরা দেশটাকে গড়ে তুলতে চাই।
ক্যাসিনোকাণ্ডে সমালোচনায় থাকা যুবলীগের নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাংগঠনিকভাবে নিয়মিত সম্মেলন করলে সংগঠন চাঙ্গা হয়। যুবলীগের সম্মেলন সামনে। সম্মেলন যেন ভালোভাবে সুষ্ঠুভাবে হয়, সেজন্য কাজ করতে হবে। সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করবে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। যুবলীগের নেতাকর্মীদের জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত অত্নজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা জাতির পিতার বিরুদ্ধে যেসব প্রতিবেদন করত, সেগুলো পড়ার পরামর্শও দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। চলমান ‘শুদ্ধি অভিযানের’ প্রেক্ষাপটে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের সতর্কবার্তাও দেন তিনি।