শেখ কামালের বহুমুখী প্রতিভা ছিল, সে বেঁচে থাকলে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারত : প্রধানমন্ত্রী

শেখ কামালের বহুমুখী প্রতিভা ছিল, সে বেঁচে থাকলে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারত : প্রধানমন্ত্রী

শাহদাত আশরাফ , ঢাকা অফিস ।।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেখ কামাল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিল। সে যদি বেঁচে থাকতো এই দেশকে, সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারত।

আজ বুধবার বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্য-স্বজনদের পাশাপাশি আর্মি অফিসাররা তাদের সহকর্মীদেরও হত্যা করেছে। আজ দেশের মানুষ মারা গেলেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জনগণ বিচার চায়।

শেখ কামালের ৭২তম জন্মদিনের আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা আরো জানান, পঁচাত্তরে তার পরিবারের এতগুলো সদস্যের নির্মম হত্যার পরও তিনি বিচার পাননি।

শেখ কামালের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আর কামাল ছোটবেলায় যখন একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম তখন আমাদের মধ্যে অনেক ঝগড়াঝাটি মারামারি হতো। তাৎক্ষণিক আবার আমরা ভাই-বোন মিশে যেতাম। কামাল ছোট ছিল সে বাবাকে অনেক সময় কাছে পেত না। তখন তো বাবা সব সময় জেল থাকতো। তাই অনেক সময় যখন আমরা খেলাধুলা করতাম এর ফাঁকে আমি যখন আব্বাকে আব্বা বলে ডাকতাম তখন কামাল আমাকে বলতো হাসু আপা ও আপা আমি তোমার আব্বাকে একটু আব্বা বলে ডাকি।

শেখ হাসিনা বলেন, মাকে প্রচন্ডভাবে সহযোগিতা করতো কামাল। ছোটবেলা থেকেই সে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ছিল। প্রত্যেকটা কাজে দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার বাবা যে সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন সেই সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য আমাদের পুরো পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। জানি না কী অপরাধ ছিল? বাবার তৈরি সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতেই তার মৃত্যু হলো। একই সঙ্গে শেখ কামাল, শেখ জামাল তারাও সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন তাদেরকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি দেশকে যেভাবে গড়ে তুলছিলেন, বেঁচে থাকলে দেশকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারতেন। সারাটা জীবন তিনি দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন শেষ পর্যন্ত দেশের জন্য তিনি জীবন দিয়ে গেলেন। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আমার মা পাশে থেকে আব্বাকে সহযোগিতা করেছে।

শেখ কামালের শিক্ষাজীবন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামাল শাহীন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে, ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। সেখানে অনার্স পাস করে মাস্টার্স পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা শেষ হয়েছিল, তারপরেই ১৫ আগস্ট ঘটে। তার রেজাল্ট যেটা পেয়েছি সে কিন্তু মাস্টার্স ডিগ্রীও পাস করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার সাথে সুলতানা কামালও এক সাথেই মাস্টার্স ডিগ্রী করেন এবং তার দুজনই পাস করেছেন। সুলতানা কামাল ভাইবা দিতে পারেনি। একদিকে ভাইবা হয় তার আগেই তারা আমাদের ছেড়ে চলে যায়।

তিনি বলেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে কামালের যে সাহসী ভূমিকা ৬ দফার পর থেকে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয়। আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া পর যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল প্রতিটি সংগ্রামেই তার অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় সে মিছিল নিয়ে আসত বটতলার মিটিং এ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সেই সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটা আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা সে রেখে গেছে। এমনকি ২৫ মার্চে রাস্তায় রাস্তায় বেরিকেট দেওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে, সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ। কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কামাল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে।