মহাসড়কে গতিসীমার বাইরে মোটরযান চালালে ১০ হাজার টাকা জরিমানা - আইনের খসড়া প্রণয়ন

রফিকুল ইসলাম সবুজ ।।

মহাসড়কে গতিসীমার বাইরে মোটরযান চালালে ১০ হাজার টাকা জরিমানা - আইনের খসড়া প্রণয়ন
মহাসড়কে গতিসীমার বাইরে মোটরযান চালালে ১০ হাজার টাকা জরিমানা
মহাসড়কে সরকারি গেজেটের মাধ্যমে নির্ধারিত গতিসীমা ছাড়া কোনো মোটরযান চালানো যাবে না। একই সঙ্গে ধীরগতির জন্য নির্ধারিত লেন ব্যতীত মোটরযান ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনও চালানো বা রাখা যাবে না। কেউ এ নিয়ম না মানলে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এমন বিধান রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে মহাসড়ক আইন ২০১৯-এর খসড়া।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থান দিয়ে গরু, মহিষ ও ছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশু মহাসড়কে প্রবেশ করালে বা মহাসড়কে অবস্থান করালে সংশ্লিষ্ট মালিককে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হবে। একইভাবে মোটরযান থেকে মহাসড়কে কোনো ক্ষতিকর পদার্থ পড়লে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সম্প্রতি আইনের খসড়াটি প্রণয়ন করে মতামত গ্রহণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত পার্কিং স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানে মোটরযান পার্কিং করা যাবে না এবং পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে অধিদফতরের নির্দেশনা মানতে হবে। এ বিধান লঙ্ঘনে সড়ক পরিবহন আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
খসড়া আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের ওপর কোনো পণ্যসামগ্রী বা মালামাল মজুদ রাখলে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থান দিয়ে পদযাত্রা করা যাবে না। যদি কেউ করেন তাহলে কমপক্ষে এক হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
 
খসড়ায় আরও বলা হয়, ‘ট্রাক বা এ ধরনের মোটরযান ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনে মাছ ও পশুপাখি বহন কিংবা সঙ্গে নেওয়া যাবে না। এ বিধান লঙ্ঘন করলে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। একমুখী পথে মোটরযান ঘুরিয়ে বিপরীত দিকে চালানো যাবে না বা অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো দিকে মোটরযান চালানো যাবে না। এ বিধান লঙ্ঘনে খসড়া কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে।
 
খসড়া বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে যে কোনো সড়ককে মহাসড়ক, প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে ঘোষণা করতে পারবে। তবে এক্সপ্রেসওয়ে ঘোষণার ক্ষেত্রে সরকার কিছু বিষয় বিবেচনা করবে-এক্সপ্রেসওয়ে শুধু দ্রুতগতির (সরকার নির্ধারিত গতিসীমা) যানবাহন চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নির্মিত হবে।
 
এতে বলা হয়, প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়কের মূল উদ্দেশ্য হবে যানবাহন চলাচলে গতিশীলতা নিশ্চিত করা। এ উদ্দেশ্যে মহাসড়কে যত্রতত্র প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে হবে। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনা থেকে মহাসড়কে অবাধ বা সরাসরি প্রবেশাধিকার বা বহিঃগমনাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এক্সেল লেন বা মার্জিং লেনের মাধ্যমে মহাসড়কে প্রবেশ ও বহিঃগমনে সুযোগ রাখতে হবে।
 
অধিদফতরের পূর্বানুমতি ছাড়া অন্য কোনো সড়ক বা মহাসড়ক প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে অধিদফতর অনুমোদিত প্রকৌশল নকশা অনুযায়ী প্রয়োজন অনুসারে ইন্টারসেকশন, ইন্টারচেঞ্জ বা এক্সেল লেন বা মার্জিং লেনের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।
 
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন ও পরিচালনা বা এ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কোনো ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে ওই ভ‚মি ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন-২০১৭’ অনুযায়ী অধিগ্রহণ করা যাবে।
 
এক্সপ্রেসওয়ে ও জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে তা স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন অনুযায়ী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে। যানবাহনের ওভারলোডিংজনিত কারণে মহাসড়কের ক্ষতি কমানো এবং সর্বোপরি মহাসড়কের স্থায়িত্ব, সার্বিক নিরাপত্তা ও যানবাহন পরিবহনের গতিশীলতা নিশ্চিতে এ আইনের মাধ্যমে যানবাহনের ওভারলোডিং নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। অনুমোদিত ওজনসীমার অতিরিক্ত ওজন বহন করে কোনো যানবাহন মহাসড়ক বা মহাসড়কে বিদ্যমান সেতু কালভার্ট বা অন্য যেকোনো অবকাঠামোর ক্ষতিসাধন করলে সংশ্লিষ্ট মোটরযানের মালিক ও চালক, অধিদফতরের নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে বলে আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
 
প্রতিবন্ধী, শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তিদের নিরাপদে চলাচলের জন্য মহাসড়কে যথাযথ ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়েছে খসড়ায়। বলা হয়েছে, মহাসড়কে নিরাপদে যানবাহন চলাচল বা মহাসড়কে যানবাহনের স্বাভাবিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন ইউটিলিটি মহাসড়কে স্থাপনের অনুমতি না দেওয়ার অধিকার সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ক্ষমতাপ্রাপ্তরা সংরক্ষণ করবেন। মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার ও মেরামতের জন্য একটি তহবিল থাকবে, যার কাঠামো, কার্যপরিধি ও কর্মকাÐ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ‘তহবিল বোর্ড আইন- ২০১৩’-এর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ‘দ্য হাইওয়ে অ্যাক্ট-১৯২৫’ দিয়ে মহাসড়ক পরিচালিত হচ্ছে। এ আইন অনেক পুরনো। তাই নতুন আইন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনের খসড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়ার পর খসড়া চ‚ড়ান্ত করে তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

সময়ের আলো