বলিউডের এ গ্ল্যামার গার্ল আশা পারেখ যে কারণে ৭৭ বছরেও বিয়ে করেননি

বলিউডের এ গ্ল্যামার গার্ল আশা পারেখ যে কারণে ৭৭ বছরেও বিয়ে করেননি
বলিউডের এ গ্ল্যামার গার্ল আশা পারেখ যে কারণে ৭৭ বছরেও বিয়ে করেননি

পোস্টকার্ড ( বিনোদন ) ডেস্ক ।।

বলিউডের এ গ্ল্যামার গার্ল আশা পারেখ চলচ্চিত্রে সৌন্দর্যের দ্যুতি ছড়িয়ে মোহিত করেছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়। কিন্তু ৭৭ পার হয়েও এখনো অবিবাহিতই থেকে গেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী আশা পারেখ। এজন্য তার কোনো অনুশোচনাও নেই। তার মতে, বুড়ো বয়সে একাকীত্বের ভয় থেকেই অনেকে বিয়ে করেন।

কিন্তু তার জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতি আসেনি। অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাতা প্রযোজক হিসেবে পরিচিতি আছে আশা পারেখের। তার জন্ম ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর।

বাবা, বাচুভাই পারেখ ছিলেন গুজরাতি জৈন সম্প্রদায়ের। মা ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের। জন্মের পরে বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ের নাম রাখা হয়েছিল সুধা আর সালমা। পরে তা পাল্টে যায় ‘আশা’য়।
মুম্বাইয়ের জে বি পেতি স্কুলে পড়াশোনা আশার।

মায়ের ইচ্ছায় ছোট থেকেই নাচ শিখতেন তিনি। বলিউডে যে ক’জন অভিনেত্রী দক্ষ নৃত্যশিল্পী রয়েছেন, আশা তাদের মধ্যে অন্যতম। শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম ছবি ‘আসমান’ মুক্তি পায় ১৯৫২ সালে। এরপর এক অনুষ্ঠানে দশ বছর বয়সি আশার নাচ দেখে ভাল লাগে পরিচালক বিমল রায়ের। তার ‘মা’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন আশা। ছবিতে তার পরিচয় দেওয়া হত ‘বেবি আশা পারেখ’ বলে।
কিন্তু শিশুশিল্পী হিসেবে যে ক’টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, সবই বক্সঅফিসে ব্যর্থ হয়েছিল। হতাশ আশা অভিনয় ছেড়ে ফিরে যান স্বাভাবিক স্কুলজীবনে।
আবার লাইট ক্যামেরা সাউন্ডের জগতে ফিরে আসেন ষোলো বছর বয়সে। কিন্তু এ বার প্রত্যাখ্যান। পরিচালক বিজয় ভাটের মনে হয়েছিল আশার মধ্যে তারকা হওয়ার উপাদান নেই। তিনি আশার বদলে ছবিতে সুযোগ দেন আর এক নায়িকা অমিতাকে। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আট দিন পরে এল ডাক। প্রযোজক সুবোধ মুখোপাধ্যায় এবং পরিচালক নাসির হুসেনের কাছ থেকে। ‘দিল দে কে দেখো’ ছবির নায়িকা হলেন আশা। ১৯৫৯ সালের এই ছবি তাকে ইন্ডাস্ট্রিতে পায়ের তলায় শক্ত জমি ও পরিচিতি, দুই-ই এনে দেয়।

শাম্মি কাপুরের বিপরীতে এ ছবির নায়িকা হওয়ার কথা ছিল সাধনার। এই ছবির সুবাদে তারকা হতে আশা পারেখের সময় লাগেনি। ষাট ও সত্তরের দশকে বেশ কিছু সফল ছবির নায়িকা ছিলেন আশা। ‘যব প্যায়ার কিসি সে হোতা হ্যায়’, ‘জিদ্দি’, ‘লাভ ইন টোকিও’, ‘তিসরি মঞ্জিল’, ‘কন্যাদান’, ‘ক্যারাভান’ ছবির সাফল্য আশা পারেখকে তার কেরিয়ারে এগিয়ে দেয় অনেকটাই।

অভিনয় শুরুর দিন থেকে ছবিতে আশা পারেখের ইমেজ ছিল গ্ল্যামার গার্ল বা টম বয়ের। সেই পরিচিত ইমেজ ভাঙে রাজ খোসলার পরিচালনায়। তার ছবি ‘দো বদন’, ‘চিরাগ’, ‘ম্যায়ঁ তুলসি তেরে অঙ্গন কি’-তে নতুন রূপে ধরা দেন আশা। পরিচালক শক্তি সামন্তর ‘পাগলা কহিঁ কা’, ‘কাটি পতঙ্গ’ ছবিতে আশার অভিনয় তার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা বলে মনে করা হয়। হিন্দি ছাড়াও আশা অভিনয় করেছেন কন্নড়, পঞ্জাবি এবং মাতৃভাষা গুজরাতি ছবিতে।

‘কাটি পতঙ্গ’-এর পরে আশা তাঁর নাচের দল নিয়ে দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। এরপর বলিউডে কিছুটা হলেও নিজের জায়গা হারান তিনি। ধীরে ধীরে আশার কাছে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ আসা কমতে থাকে। তিনি কিছু ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে এরপর অভিনয় ছেড়ে চলে আসেন দূরদর্শনের সিরিয়াল পরিচালনায়।
১৯৯৪ থেকে ২০০০ আশা পারেখ ছিলেন ‘সিনে আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রেসিডেন্ট। পরে, ১৯৯৮-২০০১ সেন্সর বোর্ডের চেয়ারপার্সন। মহিলা হিসেবে তিনি-ই প্রথম এই দায়িত্ব পান। ১৯৯২ সালে তিনি ভূষিত হন ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে। সেন্সর বোর্ডের চেয়ারপার্সন হিসেবে তিনি কোনও বেতন নিতেন না। কিন্তু তার কার্যকালের মেয়াদে যথেষ্ট বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। তিনি শেখর কাপুর পরিচালিত ছবি ‘এলিজাবেথ’-কে ভারতে প্রদর্শনের ছাড়পত্র দেননি।

বিয়ে করলেন না কেন? এই প্রশ্নের মুখোমুখি তাঁকে বহুবার হতে হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘কেউ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেননি। ’ তাই আর বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। তবে দীর্ঘদিন তিনি যে ভালবাসার সম্পর্কে ছিলেন, সে কথা বরাবরই স্বীকার করেছেন আশা। প্রথমে বলতেন না প্রণয়ীর নাম। পরে নিজের স্মৃতিকথায় তিনি বলেন, পরিচালক নাসির হুসেনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। তবে দুই পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেননি। কারণ পরিচালক-প্রযোজক-চিত্রনাট্যকার নাসির ছিলেন বিবাহিত।

আশা জানিয়েছেন, তিনি শেষ জীবনে নাসিরের সঙ্গে আর দেখা করেননি। কারণ, স্ত্রীর মৃত্যুর পরে নাসির মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তবে টেলিফোনে দু’জনের নিয়মিত কথা হয়েছে ২০০২ সালে, নাসিরের প্রয়াণের আগে অবধি।

বিয়ে না করায় বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই আশার। জানিয়েছেন, বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বেশ আছেন তিনি। তাদের সঙ্গেই কেটে যায় সময়। ওয়াহিদা রহমান এবং হেলেন, এই দুই অভিনেত্রী আশার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। বিগত কয়েক দশক ধরে তাদের বন্ধুত্ব অটুট। প্রায়-অবসর জীবনে আশার সময়ের একটা বড় অংশ কাটে নিজের ডান্স অ্যাকাডেমি এবং সমাজসেবা নিয়ে। সান্তাক্রুজে তার নামে হাসপাতাল আছে। তার সমাজসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ।