বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এলইডি, বাজার সয়লাব মানহীন এলইডি পণ্যে

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এলইডি, বাজার সয়লাব মানহীন এলইডি পণ্যে

এম এ হোসাইন ।।

বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে সবাই ঝুঁকছে এই এলইডি প্রযুক্তির দিকে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এলইডি। তবে নিম্নমানের চায়না এলইডি পণ্যের কারণে প্রতিনিয়ত ঠকছেন ক্রেতারা। আমদানি করা এলইডি পণ্যে নেই মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআইয়ের তদারকিও। ফলে প্রতারিত হলেও এ ক্ষেত্রে গ্রাহকরা কোথাও অভিযোগেরও সুযোগ পাচ্ছেন না।

প্রচলিত পণ্যের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য এলইডি। তাছাড়া এলইডি পণ্য টেকসইও বটে। একটি এলইডি বাতির স্থায়ীত্ব থাকে ৫০ হাজার ঘণ্টারও বেশি। যা সাধারণ বাতির তুলনায় কয়েকগুণ বেশি স্থায়ীত্বশীল। আলোর শক্তি, মেয়াদ, তাপমাত্রা, পরিবেশের ওপর প্রভাব সব মিলিয়ে এলইডি এখন সবার পছন্দের প্রথমে। এলইডি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। তবে আমদানি করা এলইডি পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ রয়েছে। কোনো ধরনের মান তদারকি ছাড়াই দেশে প্রবেশের সুযোগ থাকায় দেদারসে নিন্মমানের পণ্য প্রবেশ করছে বাজারে। আর সরল মনে ক্রেতারা এসব পণ্য কিনে ঠকছেন। নিম্নমানের এসব পণ্যের আশি শতাংশের অবস্থান নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায়।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, এলইডি উন্নত প্রযুক্তি। ভাল সেবা পাওয়ার জন্য ক্রেতারা বেশি দামে এলইডি পণ্য কেনেন। কিছুদিন না যেতেই এসব পণ্য নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। বিদেশি নিম্নমানের এলইডি পণ্যের কারণে দেশিয় শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টির নানা ফাঁদে ফেলা হচ্ছে ক্রেতাদের। জোরালো তদারকি না থাকলে এলইডি পণ্য থেকে ক্রেতাদের আস্থা উঠে যাবে। বিএসটিআইয়ের মান তদারকি বাড়ানো দরকার। না হলে মানহীন পণ্য কিনে ভোক্তাদের প্রতারিত হবার সম্ভাবনা বাড়বে।

বর্তমানে বিভিন্ন এলইডি পণ্যের মধ্যে টিভি, মনিটর, ফোন, গাড়ির ইন্ডিকেটর বাতি, ইনফ্রারেড রশ্মি, আলোকসজ্জা, ট্রাফিক বাতি, কম্পিউটারের মাউস, লেজার রশ্মিসহ আরো অনেক জায়গায় এখন এলইডি ব্যবহৃত হচ্ছে? কিছু প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির এলইডি পণ্য নিয়ে সুনাম থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই প্রতারণার অভিযোগ আছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, চায়না নিম্নমানের এলইডি পণ্য দেশে এনে প্যাকেটে ভরে দেশীয় পণ্য বলে চালিয়ে দেওয়া।

বিএসটিআই চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমদানি নীতি অনুযায়ী ৫৫টি পণ্যের ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের ছাড়পত্র লাগে। বাকিপণ্যগুলোতে বিএসটিআইয়ের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয় না। এই ৫৫টি পণ্যের মধ্যে এলইডি পণ্য পড়ে না। যার কারণে এলইডি পণ্য আমদানিতে বিএসটিআইয়ের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয় না। দেশীয়ভাবে যদি এলইডি পণ্য উৎপাদন করা হয় তাহলে বিএসটিআইয়ের অনুমতি বাধ্যতামূলক।

এদিকে নিম্নমানের চায়না পণ্যের সাথে স্বল্প পরিসরে উন্নতমানের পণ্যও আসছে। তাছাড়া দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও ভালমানের এলইডি পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে। তবে নিম্নমানের পণ্যগুলো দামে কম হওয়াতে বাজারে টিকে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উন্নত পণ্যগুলোর প্রতিষ্ঠানকে। ভালো-মন্দের বিচারে না গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দামের দিকটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন ক্রেতা, এতেই প্রতারিত হচ্ছেন। অল্প দিন না যেতেই পণ্যটি নষ্ট হচ্ছে অথবা নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নগরীর নামকরা লাইটিং প্রতিষ্ঠান ‘হোসেন লাইটিং এন্ড ফার্নিচার’ এর স্বত্ত্বাধিকারী মোছাদ্দেক হোসেন তপু বলেন, এলইডি সবচেয়ে লেটেস্ট প্রযুক্তি। বর্তমানে দেশে এলইডির পণ্যের বাজারের প্রায় ৯০ শতাংশ চায়নার দখলে। পুরো দেশে নামকরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যরা নিম্নমানের এলইডি পণ্য আমদানি করেন। যার কারণে অল্পদিনের মধ্যেই নানা সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানের এলইডি পণ্যগুলোর কয়েক বছরেও কোনো সমস্যা হয় না, দুই বছরের গ্যারান্টি আছে। ভালোমানের পণ্য কিনতে হলে দামও একটু বেশি দিতে হবে।

এলইডি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতার কি দেখা উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চায়না পণ্যের মধ্যেও অনেক উন্নত মানের পণ্য আছে। কোন প্রতিষ্ঠান ভালোমানের পণ্য আমদানি করে সেটা দেখতে হবে। হোসেন লাইটিং এন্ড ফার্নিচার দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লাইটিং ব্যবসা করে আসছে। এমন নামকরা প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনলে কেউ ঠকবে না।

চট্টগ্রামে এলইডি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজার কেন্দ্রিক। শক্ত একটি সিন্ডিকেটের হাতেই বন্দি হয়ে আছে এই বাজার। চায়না থেকে পণ্য এনে দেশিয় প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে তা বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে। ছয়মাস থেকে একবছর কখনো কখনো দুইবছরের গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি দেয়া হচ্ছে। কিছুদিন না যেতেই দেখা দিচ্ছে সমস্যা।

বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে তিনটি এলইডি বাতি কিনেছিলাম। ছয়মাসের গ্যারান্টি দেওয়া হয়। ১৫ দিন না যেতেই দুটি বাতি নষ্ট হয়ে যায়। একমাসের মাথায় অন্যটিরও আলো ঘোলাটে হয়ে যায়। বাতিগুলো বাদলাতে গেলে দোকানি উল্টো বলে বাসায় ভোল্টেজের সমস্যায় নষ্ট হয়েছে, পরিবর্তন করার সুযোগ নেই।