বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে খুলনা চ্যাম্পিয়ন

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে খুলনা চ্যাম্পিয়ন

ক্রীড়া ডেস্ক ।।

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে চট্টগ্রামকে ৫ রানে হারিয়ে শিরোপা ছিনিয়ে নিলো খুলনা। শিরোপা জয়ে ফাইনালে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অন্যদিকে, বল হাতে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন শহিদুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ। 

সমীকরণটা খুব কঠিন ছিল না, ৬ বলে ১৬। গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের ব্যাটসম্যানরা সেটাই মেলাতে পারলেন না। আসলে মেলাতে দেননি সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে একাদশে জায়গা পাওয়া ডানহাতি পেসার শহিদুল ইসলাম। স্নায়ুচাপ সামাল দিয়ে শেষ ওভারে কী দুর্দান্ত বোলিংটাই না করলেন তিনি। প্রথম দুই বলে ৩ রান দেওয়ার পর তৃতীয় ও চতুর্থ বলে ফেরালেন মোসাদ্দেক হোসেন আর সৈকত আলীকে। ফাইনালের সব রোমাঞ্চ শেষ ওতেই। এরপর যে আর জেতার সুযোগ ছিল না গাজী গ্রæপ চট্টগ্রামের। তাদের ৫ রানে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শিরোপা জিতে নিয়েছে জেমকন খুলনা।

নাহিদুুল ইসলামের ব্যাটের তোরে ম্যাচের শেষ বলটা হাওয়ায় ভেসে সীমানা পেরিয়ে গেল, সেদিকে অন্যদের নজর থাকবে কি, দুই বল আগেই পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় নাহিদুলের নিজেরও নজর ছিল না। খুলনার খেলোয়াড়রা তখন রুদ্ধশ্বাসে ছুটলেন মাঠে, সবাই ঘিরে ধরলেন জয়ের নায়ক শহিদুলকে। তবে ম্যাচটা যারা চর্মচক্ষে দেখেছেন, তারা জানেন, রোমাঞ্চকর ফাইনালে খুলনার জয়ের মূল নায়ক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। সতীর্থ ব্যাটসম্যানরা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের যে উইকেটে রানের জন্য হাপিত্যেশ করেছন, সেখানেই এই ডানহাতি খেলেছেন হার না মানা ৭০ রানের অনিন্দ্যসুন্দর এক ইনিংস।

মূলত মাহমুদউল্লাহর ওই ইনিংসে চেপেই নির্ধারিত ২০ ওভার খেলে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়তে সমর্থ হয় খুলনা। মাহমুদউল্লাহর ওই ইনিংসের পাল্টা দিচ্ছিলেন সৈকত আলী। লিটন-সৌম্য-মিঠুনদের ব্যর্থতার দিনে দুর্দান্ত এক হাফ সেঞ্চুরিতে চট্টগ্রামের শিরোপা জয়ের আশা ভালোভাবেই টিকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষবেলায় সতীর্থদের মতো খেই হারালেন এই ব্যাটসম্যানও, তাতেই সর্বনাশ। শেষ বেলায় শহিদুলের দুর্ধর্ষ বোলিং চট্টগ্রামকে ১৫০ রানের বেশি তুলতে দেয়নি।

চট্টগ্রাম টুর্নামেন্টের সব থেকে ধারাবাহিক দল। ফাইনালের আগে যে দুুটো ম্যাচ দলটি হেরেছিল, দুটোতেই ব্যর্থ ছিলেন দুই ওপেনার সৌম্য সরকার আর লিটন দাস। এর আগে-পরে, প্রতিটি ম্যাচেই দলের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন তারা। ফাইনালেও তেমন কিছুরই প্রত্যাশায় ছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি সৌম্য-লিটন। একবার জীবন পাওয়ার পরও ১২ রানের বেশি করতে পারেননি সৌম্য। রানআউটের খড়গে কাটা পড়ার আগে লিটন ২৩ বল খেলে করেছেন ২৩ রান। ওটাই আবার চট্টগ্রামের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

সমান ২৩ রান করেছেন শামসুর রহমান শুভও। সৈকতের সঙ্গে তার ৪৫ রানের জুটি কক্ষপথেই রাখে চট্টগ্রামকে। এরপর মোসাদ্দেক হোসেনকে (১৯) নিয়ে ৪৭ রানের জুটি গড়ে জয়ের স্বপ্ন বেশ ভালোভাবেই বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সৈকত। কিন্তু বিধিবাম! শেষ ওভারের তৃতীয় বলে মোসাদ্দেক ফিরলেন শুভাগত হোমের কাছে ক্যাচ দিয়ে। পরের বলে শহিদুলের দুর্দান্ত ইয়র্কার, ৪টি ছক্কায় ৪৫ বলে ৫৩ রান করা সৈকত বোল্ড। দারুণ ইনিংস খেলেও তিনি মাথা নিচু করে ফিরলেন, খুলনা শিবিরে তখন জয়োৎসব শুরু হয়ে গেছে।

সেই উৎসব পূর্ণতা পেল, যখন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর হাতে উঠল ঝা চকচকে ট্রফিটা। ওই ট্রফিটা হাতে তোলার যোগ্য দাবিদারই ছিলেন তিনি। প্রবল চাপের মুখে কী দুর্দান্ত ব্যাটিংটাই না খুলনা দলপতি করেছেন। স্নায়ুর চাপ সামলাতে না পেরেই কিনা কে জানে, খুলনার ব্যাটসম্যানরা ছিলেন যারপরনাই ব্যর্থ। জাকির হাসানের ২৫ আর আরিফুল হকের ২১ ছাড়া উল্লেখ করার মতো স্কোর নেই আর কারও। এরপরও দলটি দেড়শ ছাড়ানো পুঁজি গড়ল, সেটা কেবলই মাহমুদউল্লাহর স্মরণীয় ইনিংসটির কারণে। ৮টি চার আর দুটো ছক্কায় ৪৮ বলে ৭০ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। অনুমিতভাবেই ফাইনালসেরার খেতাবটা উঠেছে তারই হাতে, শিরোপা উঁচিয়ে ধরার মঞ্চে সেটা অবশ্য তার জন্য কেবলই বাড়তি পাওনা। তবে কিছুটা আদিখ্যেতাই দেখাল দর্শকশূন্য মাঠে, রাতের আকাশে আতশবাজির ঝলকানি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
খুলনা: ২০ ওভারে ১৫৫/৭ (মাহমুদউল্লাহ ৭০*, জাকির হোসেন ২৫; নাহিদুল ২/১৯, শরিফুল ২/৩৩)।

চট্টগ্রাম:২০ ওভারে ১৫০/৬ (সৈকত আলী ৫৩, লিটন ২৩, শামসুর রহমান ২৩; শহিদুল ইসলাম ২/৩৩)।

ফল: খুলনা ৫ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (খুলনা)।