প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থাকছে , গঠন করা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড

শিক্ষা ডেস্ক ।।

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থাকছে , গঠন করা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থাকছে , গঠন করা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড

৫ম শ্রেণীর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা থাকবে- এমন চিন্তা মাথায় রেখেই গঠন করা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড। এ সমপানী পরীক্ষার ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর চাপ সামলাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের এক প্রস্তাব অনুসারে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া। প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করে তা কার্যকর করতে সময় লাগবে অন্তত দু’বছর। শিক্ষা বোর্ড আইন ও বিধি তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করতে কমপক্ষে দু’বছর সময় লাগবে। ফলে এই সময়ে সমাপনী পরীক্ষা হবে অধিদফতরের অধীনেই। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।  

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মঞ্জুর কাদির, এসএসসি বা এইচএসসিতে সব বোর্ড মিলিয়ে যে পরীক্ষার্থী হয় তার চেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী হয় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষাতে। তাই পরীক্ষার জন্য অবশ্যই একটি শিক্ষা বোর্ড থাকা উচিত। এই পরীক্ষা নিতে গিয়ে আমরা প্রচ-চাপে রয়েছি। অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরীক্ষার সময় বিজি প্রেসসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তখন আমাদের প্রধান অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। হাজার হাজার কাজের মধ্যে পরীক্ষা নেয়াটা খুব কষ্টকর।

এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, আসলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থাকবে। এ পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে না। কারণ আপনি সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ডের মতো দেশে দেখেন তাদেরও প্রাথমিকে পরীক্ষা আছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রাথমিকে প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষা রাখতে হবে। তাই পরীক্ষা কিন্তু রাখতেই হবে। আর এ পরীক্ষা রাখলে একটি বোর্ড জরুরী হয়ে পড়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, সমাপনী পরীক্ষা নিতে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড করার প্রস্তাবে ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও পরীক্ষা সহসা বাতিল হবে না। তাই পরীক্ষা চালু রাখতে হলে কি প্রক্রিয়ায় শিক্ষা বোর্ডকে কার্যকর করা যায় তার পথ বের করতে এখন কাজ করছেন কর্মকর্তারা।

মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদির জানিয়েছেন, ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তাবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট’ এখন আর কার্যকর নেই। অর্থাৎ ইউনিটের কাজ নেই। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড হলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তাবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটকে’ বিলুপ্ত করে এর জনবল শিক্ষা বোর্ডে একীভূত করা হবে।

এদিকে প্রাথমিকের পরীক্ষার্থীর পরিসংখ্যানও তুলে ধরছে একটি শিক্ষা বোর্ড গঠনের যৌক্তিকতা। অধিদফতরের কর্মকর্তারা প্রত্যেকেই বলছেন, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমপানী পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষার চাপ সামলাতে পারছে না অধিদফতর। এসএসসি ও এইচএসসিতে যেখানে ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্য বোর্ড আছে ১০টি, সেখানে প্রাথমিকের ৩০ লাখের জন্য বোর্ড নেই একটিও।

২০০৯ সাল থেকে দেশের বৃহত্তর এ পাবলিক পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই পৃথক বোর্ডের দাবি উঠলেও তার বাস্তবায়ন না হওয়ায় নিয়মিত কাজ বন্ধ রেখে পরীক্ষার তদারকি করছে অধিদফতর।

জানা গেছে, এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বোর্ড গঠনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ আসার পরই কাজ শুরু হয়। ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্য কোন বোর্ড না থাকা শিক্ষার মানের জন্য সুখকর নয় বলে দ্রুত বিষয়টিতে নজর দেয়ার তাগিদ দেয় সংসদীয় কমিটির সদস্যরা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি না থাকায় জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না বলেও সংসদীয় কমিটি মত দেয়। কমিটি শিক্ষার মান বাড়াতে মন্ত্রণালয়কে তাদের কাজে গতিশীল হওয়ারও সুপারিশ করে। তারপরই অধিদফতর শিক্ষা বোর্ড গঠনে একটি প্রস্তাব পাঠালে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা প্রাথমিক সমপানী শুরু হয় ২০০৯ সালে। ওই বছর অংশ নেয় ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৬৫ জন। পরের বছর থেকে শুরু হয় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষাও। ২০১০ সালের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনীতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৮৮ হাজার ১৪৮ জন। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গত বছর হয়েছে ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ১২৩ জন।

প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড না থাকায় এই পাবলিক পরীক্ষায় ফল তৈরিতে ভুল ও অনিয়মের অভিযোগও আছে। বর্তমানে খাতা দেখা ও ফল তৈরি হয় সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে। এরপর তা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যায়। বৃত্তি প্রাপ্তির আশায় বা ভাল ফলের জন্য অনেক অভিভাবকই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দারস্থ হন। টাকার বিনিময়ে এসব কর্মকর্তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই জিপিএ ৫ পাইয়ে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবছরই পরীক্ষা নিয়ে ডিপিই’তে অভিযোগ আসছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির বলছিলেন, ৩০ থেকে ৩২ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার বোঝা অধিদফতরের ওপর দিলে আসলে তা নেয়া কঠিন। একটি বিকল্প চিন্তা করতেই হবে। বোর্ড হতে দেরি হলে কমপক্ষে বর্তমানের ১০ বোর্ডকে এ পরীক্ষার দায়িত্ব দেয়া যায়। তাতেও সুফল পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এ শিক্ষাবিদ।

কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে তার সুফল পেতে কতদিন সময় লাগবে? জানতে চাইলে অধিদফতরের মহাপরিচালক মনজুর কাদির বলেন, ‘দেখেন বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। এর জন্য আইন তৈরি করতে হবে। বিধি তৈরি করতে হবে। জনবল প্রয়োজন হবে।

সবকিছু নিয়েই আমরা কাজ করছি। মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সময়তো লাগবেই। কতদিন লাগতে পারে? উত্তরে মহাপরিচালক বলেন, অন্তত দুই বছরতো লাগবেই। অনেক কাজ করতে হবে। এসব কাজ শেষ করে বোর্ড গঠন পর্যন্ত যেতে দু’বছর তো লাগবেই। যেহেতু পরীক্ষা থাকবে, তাই বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমপনী পরীক্ষা অধিদফতরের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।