পৃথিবীর সবচেয়ে অধিক স্বচ্ছ পানির হ্রদ " দ্য ব্লু লেক "

পৃথিবীর সবচেয়ে অধিক স্বচ্ছ পানির হ্রদ
দ্য ব্লু লেক : পৃথিবীর সবচেয়ে অধিক স্বচ্ছ পানির হ্রদ

হ্রদ মহাসমুদ্রের সাথে যুক্ত না থাকায় জোয়ার ভাটা হয় না।লেক বা হ্রদ হচ্ছে ভূ-বেষ্টিত লবণাক্ত বা মিষ্টি স্থির পানির বড় আকারের জলাশয়। বিশ্বে ঠিক কতগুলো হ্রদ রয়েছে তার যথাযথ হিসেব জানা যায় না। তবে কোনো কোনো গবেষকের তথ্যমতে জানা যায় ১১৭ মিলিয়ন হ্রদ রয়েছে। আবার হিসেব করার পদ্ধতির ওপর এই সংখ্যা কম-বেশি হয়ে থাকে। ২০০৬ সালের একদল গবেষকের হিসেবে জানা যায় বিশ্বের ৩০৪ মিলিয়ন হ্রদ রয়েছে।

হ্রদগুলো মাছ ও খনিজ পদার্থের উৎস, অবকাশ কেন্দ্র, পর্যটক আকর্ষক স্থান ইত্যাদির দিক থেকে বাণিজ্যিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বৃহত্তম তিনটি হ্রদ হচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, সুপিরিয়র হ্রদ ও ভিক্টোরিয়া হ্রদ। আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য লেক বা হ্রদ হচ্ছে কাপ্তাই লেক, বগালেক, ফয়েজ লেক, মহামায়া লেক, ধানমন্ডি লেক ইত্যাদি।

সাধারণত দীর্ঘদিন একইস্থানে পানি আবদ্ধ থাকায় পানিগুলো স্বচ্ছ হয়ে থাকে। আর এই স্বচ্ছতার দিকে দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে অধিক স্বচ্ছ পানির হ্রদটি হচ্ছে ব্লু লেক বা নীল হ্রদ। হ্রদটি নিউজিল্যান্ডে অবস্থিত। এই হ্রদটিকে স্থানীয় মাওরি উপজাতীয়রা ‘রোটোমাইরেউহেনুয়া’ বলে অ্যাখ্যায়িত করেন।

হ্রদটি নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্বতের ‘নেলসন লেকস ন্যাশনাল পার্কে’ অবস্থিত। ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডের জাতীয় আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানায়, ব্লু হ্রদের ৮০ মিটার বা ২৬২ ফুট গভীর পর্যন্ত দেখা যায়! যা প্রায় পাতন করা পানির মতোই স্বচ্ছ বলা যায়।

ব্লু লেক

হ্রদের জলে মেঘের ছায়া 

ব্লু হ্রদের পানি নীল-বেগুনি দেখায়। যা শুধুমাত্র অতি স্বচ্ছ প্রাকৃতিক পানিতেই দেখা সম্ভব। হ্রদের পানি খুবই শীতল। পানির তাপমাত্রা ৫ থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এই স্বচ্ছ পানির হ্রদকে মাওরি আদিবাসীরা খুবই পবিত্র মনে করেন। তাই ধর্মীয় বিশ্বাস হোক বা গোড়ামীর কারণেই হোক, তারা সেখানে সহজে কাউকে যেতে দিতে চান না।

ব্লু হ্রদটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এরচেয়েও অধিক উচ্চতায় আরেকটি হ্রদ রয়েছে। এই হ্রদ থেকে বরফ গলা পানি পরিষোধিত হয়ে ব্লু হ্রদ তৈরি করে। এটিই এই স্বচ্ছ পানির রহস্য বলে জানা যায়। অতি বৃষ্টির কারণে ব্লু হ্রদের পানি ঘোলা হয়ে যায়। তবে কিছুদিন পর আবারও এই পানি পূর্বের মতোই স্বচ্ছরূপ ধারণ করে। 

হ্রদের তলদেশে পতিত ছায়া

যা-ই হোক, ২০১৩ সালে ডেনমার্কের ফটো-সাংবাদিক এবং পরিবেশবিদ ক্লাউস থাইম্যান সেখানে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। মূলত তিনি হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবেন বলেই সেখানে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন।

নেলসন ন্যাশনাল পার্কটি অর্থাৎ যেখানে ব্লু হ্রদটি অবস্থিত সেই পার্কটি ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১০২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই পার্কে প্রচুর দর্শনার্থী ভীড় করেন। তারা হাইকিংয়ের মাধ্যমে লেকের কাছ দিয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করতে পারেন। পার্কটি গভীর বনাঞ্চলে ঢাকা রয়েছে। এই পার্কটি কিউই পাখি ও গিরগিটির অভয়াশ্রম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র- দ্য গার্ডিয়ান, টুইস্টেড সিফটার ডট কম।