জাতীয় চার নেতার হত্যার মদদদাতাদেরও বিচারের হবে : প্রধানমন্ত্রী

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

জাতীয় চার নেতার হত্যার মদদদাতাদেরও বিচারের হবে : প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় চার নেতার হত্যার মদদদাতাদেরও বিচারের হবে : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন জাতীয় চার নেতার হত্যার মদদদাতাদেরও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। রোববার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে জেলহত্যা দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। জেলহত্যা দিবস স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বড় চক্রান্তের নির্মম প্রতিফলন বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। আলোচনায় তিনি বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, তাদের নেতৃত্বের অভাবের কারণেই তারা দুর্নীতিবাজদের নেতা বানায়। যারা বিএনপি করে তাদের মেরুদন্ড আছে কি না সন্দেহ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকারের অপকর্মের কারণেই দেশে ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা) জারি হয়েছিল। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি চাপ আসে। তারপর আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করি। বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটা দল, যার চেয়ারপারসন এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় জেলে, এত নেতা থাকতে যে মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তাকে বানাল ভারপ্রাপ্ত প্রধান। যারা বিএনপি করে তাদের মেরুদন্ড  আছে কি না এটাই আমার সন্দেহ। তিনি বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি। মা-বাবার কাছে শিখেছি দেশকে ভালোবাসতে, মানুষকে ভালোবাসতে। দেশকে ভালোবাসলে দায়িত্ব পালন করা যায়। মানুষের সমর্থন পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশে^ বাংলাদেশ উন্নয়নের এক বিস্ময়। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়বই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহŸান জানিয়ে বলেন, ওই রাজাকার, খুনি, আলবদর, আলশামস এবং খুনিদের মদদদাতাদের স্থান বাংলার মাটিতে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন হবে না। বাংলাদেশের মানুষকে সেভাবে চিন্তা করতে হবে। দেশ যেন আবার খুনিদের রাজত্ব না হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐ ও জেলহত্যাকাÐের বিচার যেমন হয়েছে, তেমনি আগামীকে জেলহত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি। আওয়ামী লীগ সরকার অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় দেয় না জানিয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা বারবার সরকারে এসেছি বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করতে পেরেছি, তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পেরেছি। জাতির পিতার হত্যার বিচার করে কার্যকর করেছি। ৩ নভেম্বর হত্যার বিচার করেছি। রায় কার্যকর করেছি। এখনও যেক’টি খুনি এখানে-সেখানে পালিয়ে আছে তাদেরও আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও খুনিদের বিচার হয়েছে, সাজা হয়েছে। কিন্তু এদের যারা দোসর, হয়তো আমরা আজকে তাদের বিচার করে যেতে পারলাম না। কোনো না কোনো দিন এদের বিচার হবেই। কারণ ইতিহাস কখনও মুছে ফেলা যায় না। হয়তো এমন একদিন আসবে এই ষড়যন্ত্রকারীরা ধরা পড়বে। এ রহস্য উদ্ঘাটন অবশ্যই হবে। কেউ না কেউ এটা করবেই। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলেছিল, ২১ বছর পর আবার ফিরে এসেছে। আবার সময় আসবে। জেলহত্যা দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল ১৫ আগস্টের হত্যাকাÐের ঘটনা শুধু একটা পরিবারের ঘটনাই বলা হতো। কিন্তু ৩ নভেম্বরের পর থেকে মানুষের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল এটা ছিল সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক এবং স্বাধীনতবিরোধীদের কাজ। কারণ তারা প্রতিশোধ নিয়েছিল। বাংলাদেশ কেন স্বাধীন হলো? তার প্রতিশোধ। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যেন বাংলাদেশ টিকতে না পারে সেজন্য এই হত্যাকাÐ।
জেলহত্যার বিচারের সময়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬ সালে আমরা এদের বিচার করি। ২০০১-এ সেই বিচারের রায় ঘোষণার তারিখ ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই খায়রুজ্জামানসহ ওই ধরনের খুনিকে আবার সেই ফরেন সার্ভিসে চাকরি দেয়। এমনকি বিদেশি দূতাবাসেও তাদের কাউকে পাঠায়। ওই সময় শুধু চাকরি না, প্রমোশনও দেয়। এক খুনি বিদেশে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর তাকে প্রমোশন দিয়ে তার অবসর-ভাতা সবকিছু দিয়ে দেয় তারা। মৃত ব্যক্তিকেও খালেদা জিয়া প্রমোশন দিয়ে গেছে, খুনি পাশাকে। এ জাতীয় অন্যায়-অবিচার তারা করে গেছে।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা দল তার চেয়ারপারসন এতিমের অর্থ আত্মসাতে জেলে। আরেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং যে পলাতক, তাকে বানাল ভারপ্রাপ্ত। বিএনপির নেতৃত্বের এত অভাব। আমি জানি না, যারা বিএনপি করে তাদের কোনো মেরুদÐ আছে কি না, আত্মমর্যাদা আছে কিÑ না সেটাই আমার সন্দেহ। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মন্ত্রী করা হয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের। যাদের নির্দেশে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকার সময় মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ আর স্বাধীন নেই। আমি একসময় সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি, মানুষের কাছে গেছি, তখন তাদের কাছে শুনেছি কীভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল তাদেরকে। আমি জানি না এদেশের মানুষ এত তাড়াতাড়ি সবকিছু ভুলে যায় কেন?
টানা তিন মেয়াদের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮-১৯ আমরা এই দীর্ঘ সময় সরকার গঠন করেছি বলে মানুষের উন্নতি হচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনাটা আবার ফিরে এসেছে। আজকে আর সেই অবস্থা দেশে নেই। একটা বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি। বাংলাদেশ আজকে সারাবিশে^ উন্নয়নের বিস্ময়। সেই সম্মানটা বাংলাদেশ আজকে পেয়েছে। এই সম্মানটা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের চলমান শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবেন এটাই আমাদের চাওয়া।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমÐলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।