কিভাবে লেবাননের এই ভয়ংকর বিস্ফোরণ !

কিভাবে লেবাননের এই  ভয়ংকর বিস্ফোরণ !

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

লেবানন সরকার দাবী করছে, রাজধানী বৈরুতের বন্দরের কাছে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে তা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সারের একটি গুদাম থেকে ছড়িয়েছে ।

মঙ্গলবারের এই বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ১৩৫ জনের প্রাণ গেছে যার মধ্যে আছেন ৪ বাংলাদেশি নাগরিকও। এছাড়াও আহত হয়েছেন ৪০০০ মানুষ। এর মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শান্তি মিশনে দায়িত্বরত ২১ সদস্যও রয়েছেন। 

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেছেন, "বৈরুত বন্দরের পাশে একটি গুদামে ২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন অ্যামেনিয়াম নাইট্রেট দীর্ঘকাল ধরে মজুদ ছিল, সেটিই এই বিষ্ফোরণের কারণ, এতে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং লেবাননের রাজধানীর অভূতপুর্ব ক্ষতি হয়েছে।"

তবে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে ওই দুর্ঘটনার উৎসস্থল হিসেবে বৈরুত বন্দরে অবস্থান করা একটি রাশিয়ান কার্গো জাহাজের কথা উল্লেখ করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এমভি রসাস নামে ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটবাহী এই রাশিয়ান জাহাজটি ২০১৩ সালে বৈরুত বন্দরে আসে। জাহাজটি মোজাম্বিকে যাওয়ার কথা থাকলেও অর্থনৈতিক সংকট এবং জাহাজে কাজ করা রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয় কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দের কারণে সেটি আর যেতে পারেনি। 

লেবাননের রাজস্ব বিভাগের প্রধান বদ্রি দাহের এর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ও অন্যান্যরা 'ভাসমান বোমা' হিসেবে তুল্য এই জাহাজটিকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করলেও এটি আসার পর থেকে আর যায়নি।

সিএনএন বলছে, দাহের এর আগে একই পদে কর্মরত ছাফিক মেরহি ২০১৬ সালে একটি মামলায় বিচারকের কাছে লেখা এক চিঠিতে লেখেন, "অনুপযোগী আবহাওয়ার মধ্যে এই জিনিসগুলো সেখানে মজুত করায় অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল যা দ্রুত সরিয়ে নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা বারবার চিঠি দিয়ে তাগাদা দিয়েছিলাম।"

অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট হল একটি গন্ধহীন স্ফটিক উপাদান যা সাধারণত সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি কয়েক দশক ধরে অসংখ্য শিল্প বিস্ফোরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ধরণের দুর্ঘটনার মধ্যে রয়েছে টেক্সাসে সার কারখানায় ২০১৩ সালের বিষ্ফোরণ যাতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে ফ্রান্সের তুলুসি রাসায়নিক প্লান্টে বিস্ফোরণে মারা যায় ৩১ জন।

অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জ্বালানি তেলের সঙ্গে মেশালে এটি ভয়ংকর বিস্ফোরকে পরিণত হয়, নির্মাণ শিল্পেও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বিদ্রোহী গ্রুপগুলো এটি বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করে।

১৯৯৫ সালে ওকলাহোমা সিটিতে বোমা বিষ্ফোরণের সঙ্গে এই উপাদানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

কৃষিতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সার হিসেবে দানা আকারে ব্যবহার করা হয় এবং আর্দ্রতায় এটি দ্রুত গলে মাটিতে মিশে নাইট্রোজেন উৎপাদন করে,এটি মাটির উর্বরতার চাবিকাঠি।

ইউনিভার্সিটি অব রুডি আইল্যান্ড এর রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক জিমমি অক্সলে বলেন, ওয়ারহাউসের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শ ছাড়া অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরকে পরিণত হওয়া কঠিন।

তিনি বলেন, "যদি আপনারা বৈরুত বিস্ফোরণের ভিডিও দেখেন,আপনারা কালো ধোঁয়া দেখবেন, লাল ধোঁয়া দেখবেন, এর কারণ রাসায়নিক বিক্রিয়া অসম্পূর্ণ।"

তিনি বলেন, "আমি ধারণা করছি সেখানে ছোট একটি বিস্ফোরণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটে বিক্রিয়া ঘটায় ,এই ছোট বিস্ফোরণে দুর্ঘটনা হতে পারে অথবা উদ্দেশ্যমূলকও হতে পারে, আমি এ বিষয়ে এখনো কিছূ শুনিনি।"

অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট একটি অক্সিডাইজার, এটি দহনকে আরো তীব্র করে এবং অন্যান্য পদার্থকে জ্বলতে সাহায্য করে, এটি নিজে খুব জ্বলন যোগ্য নয়। এ কারণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ রাখার ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম মানতে হয়, অবশ্যই এই মজুদ জ্বালানি ও তাপের উৎস থেকে দূরে রাখতে হবে। এ জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বনেট মিশিয়ে রাখার পরামর্শ দেয়,এতে ক্যালসিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট তৈরি হয়, এটি সংরক্ষণ নিরাপদ।

ওকলাহোমা বোমা বিস্ফোরণের পর যুক্তরাষ্ট্র অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সংরক্ষণ ও ব্যবহার বিধিতে কড়াকড়ি আনে। ২০০০ পাউন্ডের (৯০০ কেজি) বেশী অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ হলে এন্টি ট্যারোরিজম অ্যাক্ট অনুযায়ী সেটি তদারকি করা হয়।